1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এআই কাজের গতি বাড়াবে, তবে মানুষের বুদ্ধি ছাপিয়ে যাবে না’

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আর্টিফিশিয়েল ইন্টেলিজেন্স (এআই), অর্থাৎ ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ প্রযুক্তিতে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ? কী ধরনের চ্যালেঞ্জই বা সামনে আছে?

https://p.dw.com/p/4N3SJ
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহমুদা নাজনীন৷
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহমুদা নাজনীনছবি: privat

এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহমুদা নাজনীন৷

ডয়চে ভেলে : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টেকনোলজি বাংলাদেশে কি ব্যবহৃত হচ্ছে?

প্রফেসর ড. মাহমুদা নাজনীন : বাংলাদেশে কোনো কোনো জায়গায় তো ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ অনেক আগে থেকেই এটা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিসিপ্লিনের একটা পার্ট, যেখানে আগে এটাকে বলতাম এজেন্ট প্রোগ্রামিং৷ মানুষের মতো করে একটু চিন্তা করবে এবং সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই অনেক আগে থেকেই আছে৷ এখন এটার অ্যাডভান্স লেভেলে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে৷   

এটা বাংলাদেশে কতটা প্রভাব ফেলছে?

এআই বেজ সলিউশন বিভিন্ন প্রোডাক্টে বা সফটওয়্যারে থাকতে পারে৷ যেমন, আমরা স্টক মার্কেটে চিন্তাভাবনা করতে পারি৷ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সলিউশনগুলো, সাইবার সিকিউরিটিতে প্রোটেকশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে৷ এখন তো অনেক সফটওয়্যার আমরা বানাচ্ছি, বাইরে থেকেও আমরা যেসব সফটওয়্যার আনছি, সেখানে মেশিন ইন্টেলিজেন্ট থাকে৷ অবশ্যই এটা ব্যবহার করা হয়৷

‘আমার মনে হয় না কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করবে’

বাংলাদেশে এ নিয়ে গবেষণায় অগ্রগতি কতটা?

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই এটা কারিকুলামের একটা পার্ট৷ আমি যখন বুয়েটে পড়েছি তখনও আমাদের কারিকুলামে এটা ছিল৷ এটা কোর কোর্সের মধ্যে আছে৷ সে হিসেবে আগে অ্যাকাডেমিক লেভেলে ছিল৷ এখন যারা সফটওয়্যার বানাচ্ছে, তারা অবশ্যই এই টেকনোলজি ধারণ করছেন৷ এখন ইন্ডাষ্ট্রি পর্যায়েও এর ব্যবহার হচ্ছে৷ 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে? বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি'র বিস্ময়ের পর এই প্রশ্ন সামনে এসেছে...

এটা একটা আকর্ষণীয় প্রশ্ন৷ মানুষ যেভাবে চিন্তা করে মেশিন সেভাবে চিন্তা করবে- এটা যদিও বলা হচ্ছে তারপরও মানুষের ক্ষমতা বেশি৷ এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত৷ মেশিনকে চিন্তা করার প্রোগ্রাম তো মানুষই দিচ্ছে৷ মেশিন অনেক ফাস্ট কাজ করবে৷ মানুষ তো সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা করে কাজ করতে পারে না৷ তার বিশ্রামের প্রয়োজন হয়৷ সেটার বদলে হয়ত একটা মেশিন কাজ করবে৷ সে হিসেবে কাজের গতি তরান্বিত হবে৷ মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যাবে, সৃষ্টিশীলতাকে ছাপিয়ে যাবে এটা এখনও সেই পর্যায়ে নেই৷ আরো অনেক দূর যেতে হবে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গবেষণা, উদ্ভাবনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু?

বাংলাদেশ খুবই সম্ভবনাময়৷ সব দিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের সবকিছু যদি তরান্বিত করতে হয়, তাহলে আমরা মেশিন-বেজড জিনিসপত্র চিন্তাভাবনা করতে পারি৷ এটা কাজকে তরান্বিত করবে৷ আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে মেশিন দিয়ে গার্ড করাতে একটু সুবিধা হবে৷ আরেকটা বিষয় বলি, কোথাও যদি দুর্নীতির বিষয় থাকে, যদিও সরকার চেষ্টা করছে সেখানে যদি অটোমেশন থাকে, মেশিন ইন্টেলিজেন্স থাকে, তাহলে অনেক জিনিস সহজ হয়ে আসবে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করতে পারে?

এটা আমি মনে করি না৷ একটা উদাহরণ বলি, একজন ডাক্তার যখন রোগী দেখেন, তখন তার একটা এমআরআই রিপোর্ট দরকার৷ মেশিন সেটাকে হয়ত প্রেডিকশন করে দেবে৷ এতে ডাক্তারের কাজের দক্ষতা হয়ত বাড়লো৷ ওই প্রেডিকশন থেকে ডাক্তার হয়ত ধারণা পেলেন৷ দিনশেষে সিদ্ধান্ত কিন্তু ডাক্তারই নেবেন৷ উনার কাজের গতিকে এটা তরান্বিত করবে৷ এটা ডাক্তারকে কিন্তু রিপ্লেস করবে না৷ সেই জায়গাতে কাজের গতিকে তরান্বিত করবে, মানুষকে রিপ্লেস করবে এমনটা না৷ একটা আশঙ্কা আছে, একেবারেই লো লেভেলের কাজগুলো রিপ্লেস করে কিনা রোবট বা এআই বেজড মেশিনগুলো৷ সেই জায়গায় নতুন করে মডেল করতে হবে৷ আমার মনে হয় না কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করবে৷ সেক্ষেত্রে হয়ত একটু ট্রেন্ডআপ করতে হবে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের  পার্থক্য আরো বাড়াবে?

এখন যদি আমরা এই টেকনোলজিকে গ্রহণ করতে না পারি তাহলে একটা চ্যালেঞ্জ কিন্তু রয়ে যাবে৷ উন্নত দেশগুলো কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ যদিও উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে টেকনোলজিকে গ্রহণ করা ছাড়া আমরা সক্ষম হতে পারবো না৷ সুতারাং আমাদের নিউ টেকনোলজিকে স্বাগত জানাতে হবে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শ্রমিক-শোষণ কি কমে যাবে?

এখানে অনেক রকমের পলিসির ব্যাপার আছে৷ আমার মনে হয়, আমাদের স্কিলড লেবারের তুলনায় লো স্কিলড লেবারের চাহিদা বেশি৷ আমাদের দেশ যখন উন্নতি করবে, তখন এই চিত্রটা একটু একটু পাল্টাতে শুরু করবে৷ টেকনোলজির সঙ্গে তাদের যদি ট্রেইন্ডআপ করা যায়, তাহলে এটা কমে আসবে৷ তাদের উপর যে ন্যায্যতা কম হচ্ছে, সেটা কমে আসা উচিত৷ কারণ, পুরো সিস্টেমে এর একটা হিসাব-নিকাশ থাকবে৷ শুধু এআই ব্যবহার করলে তো হবে না, এটা তো মানুষই শাসন করবে৷ বিষয়টা হলো প্রোগ্রামটা যেন বায়াস্ড না হয়৷ সেখানে যেন মানুষের এথিক্স, প্রাইভেসি থাকে পলিসিটা তেমন হতে হবে৷

একটা রোবট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে যে খরচ তা কি মানব শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম? 

এআই তো আর পুরোটাই রোবট না৷ রোবট ছাড়াও তো সফটওয়্যারে এআই ব্যবহৃত হয়৷ বিভিন্ন প্রেডিকশনে ব্যবহার হয়৷ ব্যাংকিং খাতে ব্যবহার হয়৷ সিকিউরিটি সফটওয়্যারগুলোতে ব্যবহার হয়৷ অনেক জায়গাতেই এর ব্যবহার আছে৷ এখন আমি যদি মানুষের বদলে একটা রোবট দিয়ে চালাতে চাই, তাহলে সেটা অনেক খরচের ব্যাপার৷ সেটা আমি কোন পর্যায়ে করতে পারব, আমার ইন্ড্রাষ্ট্রি সেটা কতটা সাপোর্ট করবে, সবকিছু বিশ্লেষণ করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ ভালো, না মন্দ?

এটা বলা মুশকিল৷ আমি যেহেতু টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করেছি, বা এটাই আমার পেশা, সে কারণে নতুন টেকনোলজিকে আমি স্বাগত জানাই৷ আমার মনে হয়, এটার অ্যাপ্লিকেশন মানুষের জীবনকে সহজ করবে৷ প্রত্যেকটা টেকনোলজির কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে৷ যখন মোবাইল ফোন এসেছে, তখন অবশ্যই আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে৷ এর সঙ্গে সোশ্যাল ইনট্রোডাকশনে কিছু চ্যালেঞ্জও এসেছে৷ সেভাবে এখানেও কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো আমাদের মোকাবেলা করতে হবে৷ সেভাবে পলিসি এবং আন্তরিকতা থাকলে আমরা ওভারকাম করতে পারবো৷ সারা বিশ্ব যখন টেকনোলজিকে ওয়েলকাম করে, তখন আপনি বিচ্ছিন্নভাবে বসে থাকতে পারবেন না৷ আমরাও বিচ্ছিন্নভাবে বসে থাকতে পারবো না৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷