1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

কিডনি রোগ: চিকিৎসকের অভাব, ভুগছে মানুষ

মাসুম বিল্লাহ
৮ মে ২০১৯

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ২ কোটিই ভুগছেন কোনো-না-কোনো কিডনি জটিলতায়৷ কিন্তু এত রোগীর বিপরীতে কিডনি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা দুশ' জনেরও কম৷ চিকিৎসকের স্বল্পতা আর চিকিৎসাহীনতায় কিডনি জটিলতা নিয়েই জীবন পার করছেন অনেক মানুষ৷

https://p.dw.com/p/3I7f3
25.06.2014 DW fit und gesund Niere
ছবি: Fotolia

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদও স্বীকার করেছেন চিকিৎসকের অপ্রতুলতার কথা৷ তবে এক্ষেত্রে সরকার নানাবিধ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান তিনি৷

‘‘ইউরোলজিস্ট এবং নেফ্রোলজিস্টদের সংখ্যা কম আছে, সেটা সত্যি৷ তবে এটা সামাল দিতে সরকার নানাবিধ উদ্যোগ নিচ্ছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেছেন অধ্যাপক আজাদ৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘‘সরকার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস বেড বাড়াচ্ছে৷ এটা সরকারের নির্বাচনি ইশতাহারেও ছিল৷ সরকারি হাসপাতালে জেলা- উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার কাজ চলছে৷ প্রতিস্থাপন সহজ করতে বিদ্যমান আইনে কিছুটা পরিবর্তনও এনেছে৷''

২ কোটির বিপরীতে ২শ' চিকিৎসক

বাংলাদেশে কিডনি রোগীর মোট সংখ্যা কত সেটার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ঢাকার সাভারে এক জরিপের উপর ভিত্তি করে এই সংখ্যা ২ কোটি বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের পাশাপাশি কোনো-না-কোনো কিডনি প্রদাহে তাঁরা আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ব্যাথানাশক এবং নানা ওষুধের কারণেও কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে: রফিকুল আলম

‘‘আমাদের ছোট একটা স্টাডি করা ছিল সাভারে, সেটার ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি, বাংলাদেশে দুই কোটি লোক কোনো-না-কোনো কিডনি রোগে ভুগছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেছেন বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলম৷

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল নিজেও একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ৷ দেশে মোট রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা ‘মোটেই পর্যাপ্ত নয়' বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ অধ্যাপক রফিকুল বলেন, ‘‘আমাদের যে ব্যাপক জনসংখ্যা, সে তুলনায় আমাদের ১৬০ থেকে ১৭০ জন নেফ্রোলজিস্ট বা কিডনি বিশেষজ্ঞ আছে৷ সেখানে আমরা যদি কিডনি রোগীকে দেখতে যাই, তাহলে একেকজন ডাক্তারকে দিনে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৭০০ রোগী দেখতে হবে, কিন্তু সেটা তো কোনোভাবে সম্ভব না৷''

২০১৮ সালের অক্টোবরে ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়, কিডনি ক্যানসার ও বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ১৯ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ ২০৪০ সালে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হাজার ২৫০ হবে৷

এত মানুষের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসা না পাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করে অধ্যাপক রফিকুল বলেন, ‘‘আমাদের দেশের যত রোগীর ডায়ালাইসিসের দরকার, তার মধ্যে ১০ থেকে ২০% ডায়ালাইসিসের সুবিধা পায়৷ তাঁদের মধ্যে আর্থিক সংকটের কারণে ৬ মাস পরে বেশিরভাগ লোকই আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না৷ আর আমাদের যে পরিমাণ রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হওয়া দরকার, তার মাত্র ৫ থেকে ১০% রোগী এই সুবিধাটা পায়৷''

এই কিডনি বিশেষজ্ঞ জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১০ থেকে ১২ হাজার রোগী কিডনি ডায়ালাইসিস করছে৷ সরকারি প্রতিষ্ঠানে যান মাত্র ৭০০ থেকে এক হাজার৷ বাকিরা ডায়ালাইসিসের জন্য যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে৷

এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ হাজার রোগী কিডনি সংযোজিত অবস্থায় আছে বলে জানান অধ্যাপক রফিকুল৷

যেসব কারণে বাড়ছে কিডনি রোগ

বাংলাদেশে কিডনি রোগী বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা৷ তার মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, খাদ্যে ভেজাল ও ব্যাথানাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার  ও নেফ্রাইটিসজনিত কিডনি রোগও রয়েছে৷

অধ্যাপক রফিকুল আলম বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অসংক্রামক রোগ হলেও এগুলো দিনদিন সারাবিশ্বেই বাড়ছে৷ সে হিসাবে বাংলাদেশেও বাড়ছে৷ সেই প্রেক্ষাপটে কিডনি রোগীও বাড়ছে৷''

এছাড়া খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ব্যাথানাশক এবং অন্যান্য ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেও কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

আশা দেখাচ্ছে সরকার

চিকিৎসক ও চিকিৎসা সুবিধার অভাবে মানুষ ভুগতে থাকলেও বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো সুবিধাজনক করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ৷ এর মধ্যে কিডনি রোগীদের স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনা, কিডনি প্রতিস্থাপনের আইন সহজ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের উদাহরণ টানেন তিনি৷

‘‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার কাজ শুরু করেছে, এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে টাঙ্গাইলের একটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য বীমার কার্ড দরিদ্রদের মাঝে দেয়া হয়েছে৷ তাঁরা প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা পাবে,'' বলেন অধ্যাপক আজাদ৷

‘‘বিভিন্ন হাসপাতালে পাবলিক-প্রাইভেট চুক্তিতে কিডনির সেবা দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ যাতে নিম্নবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা এসব জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরো গরিব না হয়ে যায়৷''

কিডনি দানের আইন সহজ করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আত্মীয়দের মধ্যে কেউ যদি কিডনি দান করে, তবে প্রতিস্থাপন সহজ হয়৷ হাসপাতালে কেউ মারা গেলে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যদি সনদ দেয় যে, তাঁর ব্রেন ডেথ হয়েছে, তবে মৃত্যুর দুই ঘন্টার মধ্যে আত্মীয়দের অনুমতি নিয়ে তাঁর কিডনি সংগ্রহ করে সেটা আরেকজনকে প্রতিস্থাপন করা যাবে৷''

এছাড়া প্রত্যেক জেলায় কমপক্ষে ৫০ বেডের ডায়ালাইসিসের  চিকিৎসাকেন্দ্র এবং সব সরকারি মেডিকেল কলেজে কিডনি বিভাগ চালুর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য