করোনায় কাজ গিয়েছে, আমফানে ঘর
২২ মে ২০২০ঘূর্ণিঝড় আয়লা ১১ বছর আগে তাঁদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিলো, নোনা জল ঢুকে গিয়েছিলো চাষের জমিতে। তারপর কাজের খোঁজে তাঁদের পাড়ি দিতে হয় ভিন রাজ্যে জনমজুরি খাটতে। কিছুটা সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে এবং কিছুটা নিজেদের আয় করা টাকায় আবার ঘর তৈরি করেছিলেন তাঁরা। তারপরেও প্রতি বছর নিয়ম করে তাঁরা ভিন রাজ্যে যেতেন কাজের খোঁজে। প্রথম প্রথম অল্প লোকজন। তারপর সুন্দরবনেরহাজার হাজার মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যান। এ বারও তাঁরা গিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে।
সুন্দরবনের পরিযায়ী শ্রমিকরা বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে যান। কারণ, সেখানে মজুরির হার বেশি। এ বার করোনার ফলে লকডাউন হলো। সব কিছু থেমে গেলো। অনেক কষ্ট করে সম্প্রতি অনেকে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন। অনেকে এখনও রাস্তায়। বিধ্বংসী আমফান তাঁদের বাড়ি আবার মিশিয়ে দিয়েছে। আবার তাঁদের চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। আবার মাথার ওপর ছাদ হারালেন তাঁরা। নোনা জলে জমির সামনে স্থবিরের মতো বসে থাকা ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই। লকডাউন কাজ খেয়েছে। এ বার ঝড় বাসাও খেয়ে নিল। তাঁদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
এরকমই একজন হলেন জামাল মন্ডল। জানিয়েছেন, ''অনেক কষ্ট করে বাড়ি ফিরেছি। লকডাউনের পর কাজ ছিলো না। ফিরে এসে দেখলাম আমফান সব নিয়ে নিলো। জানি না, কী করব, কোথায় থাকব, কেমন করে খাব, পরিবারের লোকেদের খাওয়াব? কিছুই ভাবতে পারছি না।'' আরেক পরিযায়ী শ্রমিক আলি কাজ করতেন কেরালায়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাস, ট্রাক, হাঁটার পর বাড়ি ফিরেছেন। এসেই বিপর্যয়ের মুখে। বাড়ি গিয়েছে। মাছ ধরার ডিঙিও ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। ভাই নিখোঁজ। নিজে আশ্রয়শিবিরে। জানেন না কী হবে এরপর।
আগের বার তো শুধু আয়লা ছিলো। এ বার তো তাঁরা জোড়া বিপদের সামনে। আমফান ও করোনা। আমফান তছনছ করে দিয়েছে সুন্দরবন সহ পশ্চিমবঙ্গের বিশাল এলাকা। করোনার প্রভাবে লকডাউন এখনও চলছে। অর্থনীতি ধ্বসে গিয়েছে। কাজকারবার লাটে উঠেছে। এখনও সুন্দরবন বিচ্ছিন্ন। সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা আগে ঠিক হবে। তারপর ভিন রাজ্যে কাজের সুযোগ তৈরি হবে। তারপর যাওয়ার প্রশ্ন।
ফলে হাজার হাজার মানুষের সামনে দিনগুলো খুবই কষ্টের। কীভাবে তার মোকাবিলা করবেন তা তাঁদের অজানা। এখন তাঁরা সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয়ে আছেন। সেটাও কতদিন, এই প্রশ্ন থাকছে। প্রকৃতির এই মারের সামনে বড় অসহায় এই মানুষজন। যে ভাবে বারবার দুর্যোগ আছড়ে পড়ছে সুন্দরবনের ওপর, সেখানকার মানুষজনের ওপর, তাতে বারবার তাঁরা সর্বহারা হচ্ছেন। বড় অনিশ্চিত, কষ্টকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীর বক্তব্য, আয়লার পরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই অঞ্চলে আর কাজ ছিলো না। আবার একই ঘটনা হবে। ওঁদের বাইরে যেতেই হবে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো কবে যাবেন? ততদিন চলবে কী করে?