করোনার টিকা নিতে পেরে বাঙালিরা খুশি
২১ জানুয়ারি ২০২১ইউরোপের অনেক দেশের মত জার্মনিতে করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে৷ এদেশে প্রথম টিকা নিয়েছেন ১০১ বছর বয়সী একজন নারী৷ অনেক দেশের মত জার্মানিতেও ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াব টিকা দেওয়া প্রথম শুরু হয়েছে বয়স যাদের ৮০ ওপরে তাদের৷
তবে অ্যামেরিকায় করোনার প্রকোপের হার যেসব রাজ্যে বেশি সেখানে ৫০, ৫৫ বছর বয়সিদেরও করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে৷ তাদেরই একজন ডালাসের বাসিন্দা নিশাত নাজনীন চকোরী৷ তিন চারদিন আগে ভ্যাকসিন নেয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তিনি ৷ চকোরীর মা ৭৫ বয়সি হাসিনা বেগম টিকা নিয়েছেন তিন চার সপ্তাহ আগেই৷ ওনার এমনিতে একটু ঠান্ডা লাগার ভাব থাকলেও টিকা নেওয়ার পরে তিনি তেমন কিছু ফিল করেন নি৷
এদিকে লন্ডনে ডাক্তারি করেন ইফ্ফাত আযিম পিয়াল, তিনি দুটো ভ্যাকসিনই নিয়েছেন৷ তার ডাক্তার স্বামীও নিয়েছেন দুটোই৷ কর্মরত ডাক্তার বলে টিকা নিতে হয়েছে তাদের৷ তিনি বললেন বাঙালি ডাক্তার বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মী যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই খুব ভাল আছেন এবং তাদের কারো শরীরেই কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি৷
অবশ্য ৫৫ বছর বয়সি ডাক্তার পিয়াল অন্যরকম একটি খবর জানালেন, লন্ডনে বয়স্কদের কেউ কেউ টিকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে মহামূল্যবান টিকাগুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সেখানকার আগ্রহী বাঙালি শিক্ষার্থীদের শরীরে পুশ করা হয়েছে৷
টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা মাইনাস ১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রাখতে হয়৷ সেভাবে রাখা হলেও নাকি ভ্যাকসিন পাঁচদিনের মতো কার্যকর থাকে৷
কাজেই বর্তমান পরিস্থিতিতে মহামূল্যবান ভ্যাকসিন নষ্ট করা কি ঠিক? আমি বলব প্রবীণদের ফিরিয়ে দেওয়া টিকা যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পেয়েছে তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান৷ আসলে কিছুদিন আগে কেউ একজন আমাকে একটি ছোট্ট মজার ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছিল, তাতে অল্প বয়সি এক ছেলের ভ্যাকসিন পেতে নাকি প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগে যাবে! একারণে অবশ্যই ওই শিক্ষার্থীরা মহাভাগ্যবান!
ফিরে যাই আবার অ্যামেরিকায়, ডালাসের বাসিন্দা ৬৭ বয়সি জাহেদ হোসেন৷ টিকা নেওয়ার তিন দিন পরে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সাথে জ্বর, ডায়রিয়া এবং বমি৷ তবে টিকার সাথে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়নি৷
অ্যামেরিকায় টিকা নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হওয়া জাহেদ হোসেনের মতো একটি ঘটনা লন্ডনেও ঘটেছে বলে জানান, ডাক্তার পিয়ালও৷ লন্ডনে তারই পরিচিত একজন বাঙালি ভ্যাকসিন নেওয়ার ঠিক ১০ দিন পরই কোভিডে আক্রান্ত হন৷ ডাক্তাদের মতে, করোনার জীবাণু তার শরীরে আগে থেকেই ছিলো বলেই নাকি পরে তা বেরিয়ে এসেছে ৷
এদিকে বন শহরের বাসিন্দা বন্যা ফেরদৌস তার টিকা নেওয়ার ছবি শেয়ার করেছেন ফেসবুকে৷ জার্মানিতেডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া ৮০ এর বেশি বয়সিদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, বন্যা অবশ্যই এর ব্যতিক্রম৷ একটি নার্সিং হোমে কাজ করার সুবাদেই টিকা নেওয়ার সুযোগটি তিনি পেয়েছেন৷ আমার জানা মতে আশির ওপরে বয়স এমন বাঙালি এখনও জার্মানিতে তেমন নেই বললেই চলে৷ আমার পরিচিত দক্ষিণ জার্মানির এরলাঙ্গেন শহরের সিমেন্স কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত ইন্জিনিয়ার ৮৫ বছর বয়সি আবদুল ওয়াহেদ টিকা নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন৷ অনেকের মতো তাঁর নাম ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে, যে কোনো সময় ডাক আসতে পারে বলে তিনি জানালেন টেলিফোনে৷
তবে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে বাঙালিদের মধ্যে যতটা উচ্ছ্বাস আর আগ্রহ দেখা যায় এদেশিদের মধ্যে কিন্তু তেমনটা লক্ষ্য করিনা বরং এর উল্টোটাই মনে হয়৷