1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকাকরণে ফ্রান্সে যত সমস্যা

১২ জানুয়ারি ২০২১

ফ্রান্সে শুরু হয়েছে করোনার টিকাকরণ। কিন্তু মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে বিপুল ভয়।

https://p.dw.com/p/3no85
ফ্রান্সে টিকাকরণ
ছবি: Theo Giacometti/Getty Images

সম্প্রতি প্রায় ২৪ জন সাংবাদিক জড়ো হয়েছিলেন উত্তর-পশ্চিম প্যারিসের একটি হলঘরে। সেখানে হাজির ছিলেন ফ্রান্সের একাধিক রাজনীতিবিদ এবং চিকিৎসক। তাঁরা সেখানে ফরাসি পতাকার রঙের লাল, সাদা, নীল রিবন কাটছিলেন।

'আমরা সরকারের সহকারি। তাদের বিজ্ঞাপনদাতা নই।' রিবন কাটার পরে মাইকে ঘোষণা করেন পয়সি রাজ্যের মেয়র কার্ল অলিভ। এরপর তাঁরা ঢুকে যান ঘরের ভিতর। সাংবাদিকেরাও পিছনে পিছনে যান।

এই হলটি দেশের অন্যতম কোভিড টিকাকরণ সেন্টার। স্থানীয় পুরসভা ওই সেন্টারটি তৈরি করেছে এবং চালাচ্ছে। এই ধরনের সেন্টারগুলির মাধ্যমেই ফ্রান্স দেশজুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়েছে। যদিও গোটা প্রক্রিয়াটি নিয়ে এখনো প্রশাসন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

ঐতিহাসিক মুহূর্ত

'আমি আবার রেস্তোরাঁয় যেতে চাই। পার্টি করতে চাই। সন্তানদের নিশ্চিন্তে রাস্তায় বের করতে চাই।' স্থানীয় বাসিন্দা ক্রিশ্চিয়ান লেহম্যান বলেছেন সাংবাদিকদের। ওই টিকাকরণ সেন্টারে কাজ করছেন ক্রিশ্চিয়ান। কিছুক্ষণের মধ্যএই একটি নীল কোট পরে তিনি ভ্যাকসিন দিতে শুরু করবেন।

মেয়র অলিভ সমস্ত কিছু পরিদর্শন করছিলেন। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলেন যে, তিনি অত্যন্ত খুশি, স্থানীয় প্রশাসন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারায় তিনি আনন্দিত। ৫১ বছরের মেয়রের মুখে হাসি লেগে ছিল। তিনি বলছিলেন, এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত সকলে করোনার টিকা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'পয়সির ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে আমি সামিল হতে পেরেছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।' অলিভ জানিয়েছএন, এলাকায় এমন আরো ১০টি কোভিড সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। গোটা দেশে তৈরি হচ্ছে ৩০০টি। প্রতিটি সেন্টারে দিনে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অলিভ।

হাস্যকর ঘটনা

ফ্রান্সের টিকাকরণ দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। কোভিডে ফ্রান্স ভয়াবহ ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। গোটা ইউরোপই কোভিডে ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মিশেল রোচয় উত্তরের আরেকটি শহরে টিকাকরণের কাজ করছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, আরো ৩০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি একটি আবেদনপত্র তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন, টিকাকরণের প্রচার 'গ্র্যান্ড ন্যাশনাল কজ' হিসেবে ঘোষণা করতে। 'আমাদের নিয়ে সকলে হাসাহাসি করছে।' ডিডাব্লিউয়ের কাছে অভিযোগ করেছেন মিশেল। তাঁর বক্তব্য, টিকাকরণের পুরো কাজটি অসম্ভব ধীরে হচ্ছে। সে কারণেই সাধারণ মানুষ কার্যত হাসাহাসি শুরু করেছে।

মিশেলের মতে, ভুল মানুষদের নিয়ে সরকার কোভিড টিকাকরণের প্রচার শুরু করেছে। 'চিকিৎসক অ্যালেইন ফিশার সরকারের মুখ্য টিকাকরণ স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি বলছেন, টিকা সরবরাহের বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণাই নেই।' অথচ মূল কাজটিই টিকা ডিস্ট্রিবিউট করার। ডিডাব্লিউয়ের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মিশেল।

সমস্যা নেই

প্রশাসন এবং ফরাসি সরকার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। সরকারি দলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, গোটা ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। পুরো পরিস্থিতিকে তিনি ফুটবল ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, খেলা শুরুর প্রথম পাঁচ-ছয় সেকেন্ডেই ফলাফল নিয়ে উত্তেজিত হলে মুশকিল। ৯০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মাইনাস ৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যেতে পারে, এমন ফ্রিজার পেতে খানিক সমস্যা হচ্ছে প্রশাসনের। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে। টিকাকরণও আরও দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা যাবে।

ভ্যাকসিন দেওয়ার একটি লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। সকলের আগে রাখা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম। কিছুদিনের মধ্যেই প্রশাসনের হাতে আসবে নতুন ভ্যাকসিন। যা অত কম তাপমাত্রায় রাখার প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক ভাবে সমস্ত কাজই অত্যন্ত সতর্ক ভাবে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারি মুখপাত্র। সাফল্য পেলে কাজে গতি আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, মডার্নার ভ্যাকসিন ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা যাবে।

লজিস্টিক একমাত্র সমস্যা নয়

ফ্রান্সের সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো, সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে চাইছেন না। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ফ্রান্সে প্রতি দশজনে মাত্র চার জন ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী।

এর সব চেয়ে বড় কারণ হলো, মাত্র ৪০ শতাংশ ফরাসি মনে করেন, সরকার এই কাজে যথেষ্ট পটু নয়। মেয়র অলিভ অবশ্য মানুষের এই ভয় কাটাতে চাইছেন। তিনি এবং ফ্রান্সের ৩০০ জন মেয়র চাইছেন, সমস্ত মেয়ররা যাতে প্রকাশ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুমতি পান। তাহলে মানুষের ভয় কমবে।

লিসা লুই/এসজি