এবার করোনা টিকা দেয়া শুরু
২৬ জানুয়ারি ২০২১কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে বুধবার, ২৭ জানুয়ারি শুরু হলেও ব্যাপকভাবে টিকা দেয়া হবে আগামী মাস থেকে৷
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন৷ প্রথম দিন ২০-২৫ জনকে টিকা দেয়া হবে৷ পরের দিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরো ৫০০ জনকে এই টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ শুরুতে যারা টিকা পাচ্ছেন, তাদের উপহারের টিকা থেকে দেয়া হচ্ছে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এবং করোনা টিকা কর্মসূচির মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘‘প্রথম যে ২০-২৫ জন টিকা পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশার ফ্রন্ট লাইনার আছেন৷ তাদের তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে৷ পরের দিন পাঁচটি হাসাপাতালে শুধু ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়া হবে৷’’
এরপর সাত দিন বিরতি দেয়া হবে৷ ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে৷ সেটাই মূল কর্মসূচি৷
বুধবার উদ্বোধনের পর ঢাকার যে পাঁচটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার টিকা দেয়া হবে সেগুলো হলো: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, টিকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে এটা ধরে নিয়েই টিকা দেয়া হচ্ছে৷ জাতীয় ইম্যুনাইজেশন কর্মসূচির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে৷ করোনা টিকার জন্য বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে৷ যেসব হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে, সেখানে মেডিক্যাল টিম থাকবে৷ ওই টিমে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন৷
বুধবার থেকে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন অ্যাপটি কাজ শুরু করবে৷ এই অ্যাপে ভ্যাকসিন পেতে হলে নিবন্ধন করতে হবে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে শুরু হতে যাওয়া টিকা কর্মসূচিতে ৪২ হাজার কর্মী কাজ করবেন৷ তার মধ্যে ১৪ হাজার টিকা দেবেন৷ বাকিরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন৷ স্বেচ্ছাসেবকরা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির৷ আর যেসব হাসপাতালে এই টিকা দেয়া হবে তাদের জনবলও এই কর্মসূচিতে যুক্ত থাকছে৷
এদিকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশের কিছু মানুষের মধ্যে এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে৷ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৪.৬ শতাংশ নাগরিক একটি কার্যকর, নিরাপদ, চিকিৎসক কর্তৃক সুপারিশকৃত টিকা নিতে চায় বিনামূল্যে৷ ৭.৮ শতাংশ নাগরিক একেবারেই টিকা নিতে ইচ্ছুক নন এবং ১৭.৬ শতাংশ নাগরিক টিকা নেবেন কিনা এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত৷ ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ৩ হাজার ৬৪৭ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে৷
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘টিকা নিতে চান না, দ্বিধাগ্রস্ত এরকম মানুষ সারা বিশ্বেই আছে৷ আবার টিকা দেয়া শুরু হলে এদের সংখ্যা কমে আসে৷ টিকার কার্যকারিতা আস্থা বাড়িয়ে দেয়৷’’
তিনি বলেন, কেউ কেউ মনে করেন, টিকার কার্যকারিতা থাকবে ছয় মাস থেকে এক বছর, তাহলে টিকা নিয়ে লাভ কী? এই চিন্তা ঠিক নয়৷ কারণ, এই সময়ে টিকার কারণে করোনা সংক্রমণ কমে যাবে৷ ফলে করোনাও কমে যাবে৷ এক সময়ে করোনা গুরুত্বহীন সর্দি-কাশির মতো হয়ে যাবে৷
তার মতে, ‘‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকার প্রস্তুতি ভালো৷ তবে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপের বিকল্প থাকতে হবে৷ আর জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও অন্য বিকল্প ডকুমেন্ট গ্রহণ করা উচিত৷'' তিনি বলেন, অনেকেরই অ্যাপ থেকে নিবন্ধন করার মতো ফোন বা প্রযুক্তি নেই৷ আর যার কোনো ডকুমেন্ট নেই, সে যেন ইউপি চেয়ারম্যানের সনদ নিয়ে নিবন্ধিত হতে পারে৷
বাংলাদেশে বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে মোট তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনছে৷ তার ৫০ লাখ ডোজ সোমবার এসেছে৷ এরপর প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ আসবে৷ আরো হাতে আছে উপহারের ২০ লাখ ডোজ৷ ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার কথা রয়েছে৷