ইরানে প্রতিবাদের প্রতীক আমিনিকে সাখারভ পুরস্কার দিলো ইইউ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মঙ্গলবার তরুণ ইরানি কুর্দি নারী জিনা মাহসা আমিনির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়৷ পুলিশী হেফাজতে তার মৃত্যু ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল৷ ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ধর্মীয় পুলিশের হাতে আটক থাকা অবস্থায় ২২ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন আমিনি৷
আমিনির মৃত্যুর পর ‘ওম্যান, লাইফ, ফ্রিডম' আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ সংগঠনটির কিছু সদস্য এই পুরস্কার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
পার্লামেন্টে যা বলা হয়েছে
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা বলেন, ‘‘এই বছরের সাখারভ পুরস্কার ইরানের সকল সাহসী এবং প্রতিবাদী নারী, পুরুষ ও যুবকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়, যারা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও পরিবর্তনের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছেন৷''
আমিনির পরিবারকে পার্লামেন্টের একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি৷ এ বিষয়ে দু:খ প্রকাশ করেন মেটসোলা৷ আমিনির মা, বাবা এবং ভাইকে গত শুক্রবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পুরস্কার নিতে যাওয়ার সময় তেহরান বিমানবন্দরেই আটক করা হয়৷ কর্তৃপক্ষ পরে তাদের পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করে৷
মেটসোলা বলেন, ‘‘তারা ইরানের সরকার আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন৷ ইরানের জনগণ প্রতিদিন কীসের মুখোমুখি হয় তার আরেকটি উদাহরণ এই ঘটনা৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য লড়াইয়ে ইরানের নারীদের সাহস এবং অদম্যতা বন্ধ হবে না৷ তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না এবং তারা আজ এখানে না থাকলেও তাদের উপস্থিতি অনুভূত হবে৷''
আমিনি পরিবারের আইনজীবী সালেহ নিকবখতের পাশাপাশি পুরস্কারটি পেয়েছেন ইরানের নারী অধিকারকর্মী আফসুন নাজাফি এবং মারসেদেহ শাহিনকার৷ আমিনির বোন নাজাফি এখন নির্বাসনে রয়েছেন৷
বিক্ষোভের ঢেউ, সরকারের দমন
আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ শুরু হয়৷ তেহরানে মুসলিম ধর্মগুরুর নেতৃত্বাধীন সরকারের অবসান এবং নারীদের মাথা ঢাকা স্কার্ফ ব্যবহারে আইন বাতিলের দাবিতে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়৷
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে এই বিক্ষোভ দমন করে৷ শত শত মানুষ নিহত হন এবং কয়েক হাজার প্রতিবাদকারীকে আটক করা হয়৷ এই বছরের শুরুর দিকে বিক্ষোভের মাত্রা কমে আসে, তবে মাঝেমধ্যেই জনঅসন্তোষের ঘটনা ঘটে চলেছে৷
মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষাকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সম্মান জানাতে ১৯৮৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাখারভ পুরস্কারের ঘোষণা দেয়৷
এর নামকরণ করা হয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভিন্নমতাবলম্বী সোভিয়েত আন্দোলনকারী আন্দ্রেই সাখারভের নামে৷
এডিকে/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)