অভিবাসীদের গালি দিয়ে বেকার
১৫ মে ২০১৮২৬ বছর বয়সি মোনির ওমেরজাই ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করলে তা ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি৷ লাখে লাখে ক্লিক৷ ইংল্যান্ডের দ্য গার্ডিয়ান বা ডেইলি মেল পত্রিকায় ঘটনাটি নিয়ে সুদীর্ঘ প্রতিবেদন৷ শেষমেষ অকুস্থলে পুলিশি তদন্ত – ও হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট শ্বেতাঙ্গ মহিলাটি তার চাকরি খুইয়েছেন, বিনা নোটিশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷
বলতে কি, শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ, বংশোদ্ভূত বা বহিরাগত, অধিবাসী বা অভিবাসী, আমরা সকলেই কিছুটা ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড – আমাদের সকলেরই একটা ভালো দিক আছে, আবার একটা খারাপ দিকও আছে৷
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ক্র্যানব্রুক থেকে আসা কেলি পোচা নিজেই পরে বলেছেন যে, তাঁর বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে, দিনটা তাঁর খারাপ কাটছিল, তিনি আসলে ওরকম নন, দু'পাত্তর পানও নাকি করেছিলেন৷ তার ওপর নাকি পাশের টেবিলের ‘বিদেশিরা’ তাঁর দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে নিজের ভাষায় কীসব বলায় তিনি মাথা গরম করে ফেলেন৷
মুশকিল হলো এই যে, মাথা গরম করলে তার মুখ দিয়ে ইংরেজি ‘চার অক্ষরের অশ্রাব্য শব্দটি’ বেরোয় যেন আতসবাজির মতো৷ তাছাড়া তার বক্তব্য মূলত বর্ণবিদ্বেষীদের সেই দু'টি বাঁধা গতে, ‘‘তোমরা এখানে কী করছ? তোমরা বাড়ি ফিরে যাও৷’’ এমন কথা তারা বলতে পারেন শুধু একটা কারণে, আর তা হলো, ‘‘আমার জন্ম এখানে, আমি এখানেই মানুষ হয়েছি৷’’
ওদিকে মোনির ওমেরজাই ক্যানাডায় এসেছেন ১৩ বছর আগে৷ গোটা তিনেক আফগান, অভিবাসী বন্ধুকে নিয়ে ডাইনারে খেতে গিয়েছিলেন৷ তাঁরা মিসেস পোচাকে ‘রেসপেক্ট’ বা মানুষজনকে শ্রদ্ধা করে চলার কথাও বলেছেন৷
তখন মিসেস পোচার মনে পড়ে, ভালো ইংরেজি না জানলে আবার ক্যানাডিয়ান কিসে? এই বিদেশি-বহিরাগত-উদ্বাস্তু-অভিবাসীরা কি তাঁর মতো ট্যাক্স দিয়ে থাকে? এক কথায়, একজন শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ মহিলার জাতিবাদী, অন্ধকার দিকটা এই ভিডিওতে যেমন ধরা পড়েছে, তা সচরাচর দেখা যায় না, কেননা মনোভাবটা পুরোমাত্রায় উপস্থিত থাকলেও, সাধারণত উহ্যই থাকে৷
অপরদিকে অভিবাসীদের আচার-আচরণ যে সবসময় স্কুলের ফার্স্ট বয়ের মতো হয়, এমনও নয়৷ তারাও অনেক কিছু বলে ও করে থাকেন, যা হয়তো মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷
যে কোনো দেশে, যাঁরা ছিলেন ও যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে নতুন করে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠা প্রয়োজন, সে কারণে দু'পক্ষকেই সাবধান থাকতে হবে৷ দু' ধরনের বা দশ ধরনের জীবকে চিড়িয়াখানায় একই খাঁচায় রাখলে, তাদের সকলকেই সমঝে চলতে হয়, কেননা এরা ওদের ভাষা বোঝে না; এরা যে পরিস্থিতিতে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে, ওরা সে পরিস্থিতিতে কামড়ায়৷
অ্যালবার্টায় ভুল যেটা হয়েছে, সেটা হলো এই যে, ভদ্রমহিলা সাধারণ ভদ্রতার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছেন৷ অভিবাসীদের প্রতি তার মনোভাবও সেই সংক্রান্ত রাজনীতি যা-ই হোক না কেন, ক্যানাডার সমাজে বা সংবিধানে কোথাও লেখা নেই যে, মানুষজনকে এভাবে প্রকাশ্য স্থানে গালিগালাজ করা চলে৷
অভিবাসীদের দেশ ক্যানাডায় তার এই জাত্যাভিমান ক্যানাডার আদি ইন্ডিয়ান অধিবাসীদের কেমন লাগবে, সেটা অবশ্য তারাই জানেন৷
এসি/এসিবি