অভিবাসনপ্রত্যাশীকে পিটিয়ে শূকরের মাংস খাওয়ানো
১৮ মে ২০১৫জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে পুলিশি নির্যাতনের রোমহর্ষক দুটি ঘটনা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করেছে নর্ডডয়েচ রুন্ডফুঙ্ক রেডিও (এনডেআর)৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোবাইলে তোলা বেশ কিছু ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীরা তা খতিয়ে দেখছেন৷ ছবি এং মেসেজগুলোতে হ্যানোভার শহরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিবাসী নির্যাতনের অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে৷ অ্যাটর্নি জেনারেল টোমাস ক্লিঙ্গে এনডেআরকে জানান, গত সপ্তাহে তাঁরা এ অভিযোগটি পেয়েছেন, এখন তদন্ত চলছে৷ তবে জার্মানির মানবাধিকার সংস্থা ‘প্রো অ্যাসাইল' ইতিমধ্যে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ এক বিবৃতিতে হানোফার পুলিশকে ‘বর্ণবাদী' আখ্যা দিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে তারা৷
সরকারি রেডিও ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনডেআর এক্সক্লুকিভ প্রতিবেদনে দুটি ঘটনা তুলে ধরেছে৷ প্রথম ঘটনাটি ২০১৪ সালের৷ সে বছরের মার্চ মাসে হ্যানোভার রেলস্টেশন থেকে এক আফগান যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ১৯ বছর বয়সি যুবকটির কাছে পাসপোর্ট বা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিলনা৷ পুলিশ তাঁর শেকল বাঁধা পা ধরে টেনেহেঁচড়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে নিয়ে যায়৷ থানায় নিয়ে পেটানো হয় তাঁকে৷ এনডেআর-এর কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এসেছে, যাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা আফগান যুবকটিকে নির্যাতন করার খবর সানন্দে তাঁর এক সহকর্মীকে জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘(জার্মানিতে) অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে আফগানটিকে আমি আচ্ছামতো ধোলাই দিয়েছি৷ নাকের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়ায় ও চিৎকার করে উঠল৷ মজা লাগছিল আমার৷ তারপর আমি ওকে পায়ের শেকল ধরে টেনেটেনে স্টেশন থেকে বাইরে নিয়ে যাই৷ সে তখন শুয়োরের মতো চিঁ চিঁ করছিল৷''
দ্বিতীয় ঘটনাটি গত বছরের সেপ্টেম্বরের৷ পুলিশি নির্যাতনের এই শিকারের বয়সও ১৯৷ তবে সে আফগান নয়, মরোক্কান৷ বৈধ কাগজপত্রও ছিল তাঁর কাছে৷ তাঁর অপরাধ, বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠা৷ এই অপরাধে পুলিশ তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই চলে অকথ্য নির্যাতন৷ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নির্যাতন সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘‘(এক কর্মকর্তা) ছেলেটির শুয়োরের মতো চিঁ চিঁ আওয়াজ শুনেছে৷ জারজটা ফ্রিজ আর মেঝে থেকে শূকরের মাংস গপ গপ করে খেয়েছে৷''
শূকরের মাংস মুসলমানদের কাছে হারাম৷ তাই মরক্কোর যুবকটিকে তা খেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ দুটি ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে জার্মানির কেন্দ্রীয় পুলিশ৷
এদিকে এক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বাঁচানোর খবরও এসেছে সংবাদ মাধ্যমে৷ রবিবার লোয়ার স্যাক্সনির আরেক শহর লিঙ্গেনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন ৩৬ বছর বয়সি এক মরোক্বান৷ পথচারীরা এসে তাঁকে মাটিতে ফেলে গায়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে৷ তারপর পুলিশ এসে দ্রুত নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ আত্মহত্যা করতে যাওয়া লোকটিকে সোমবার মরক্কোয় জোর করে ফেরত পাঠানোর কথা৷ অভিবাসী হতে চাইলেও তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর একদিন আগে তাই আত্মহননের চেষ্টা করেন তিনি৷ তাঁর অবস্থা এখন বেশ সংকটাপন্ন৷
এসিবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি, এনডেআর)