‘আদিবাসীদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে'
১৩ জুন ২০১৭আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ বৎসোয়ানা'র মধ্যভাগে কালাহারি মরুভূমি৷ স্যান উপজাতির মানুষ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করে৷ আগুন জ্বালাতে শুধু ধৈর্য লাগে না, আশেপাশের ঝোপঝাড় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও দক্ষতাও থাকতে হবে৷ সামাজিক শিল্পপতি তাবিসো মাশাবা মনে করেন, এই জ্ঞান গ্রাম্য সমাজের জন্য অভিনব সুযোগ এনে দিতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘একভাবে দেখতে গেলে আমরা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছি৷ আমার মনে হয়, দেশজ জ্ঞানের ভিত্তি হলো মানুষের জ্ঞান, হাতেনাতে পাওয়া শিক্ষা, হাতের কাজ– এই সব৷ সেটি বৎসোয়ানার অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে পারে৷ কারণ, এই মুহূর্তে মানুষের মধ্যে কিছু একটা করার তাগিদ জাগাতে হবে, যাতে তারা টেকসই ব্যবসার পথে যেতে পারে৷''
স্যান উপজাতি কয়েকশ' বছর ধরে এমন শুষ্ক পরিবেশে টিকে রয়েছে৷ বর্তমানে বেকারত্ব ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে দূরে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বললেই চলে৷
তাবিসো মাশাবা মনে করেন, স্যান উপজাতি আধুনিক সমাজে অনেক অবদান রাখতে পারে৷ বিশেষ করে কম সম্পদ নিয়েও কীভাবে অনেক কিছু করা সম্ভব, সেই শিক্ষা অনেকের কাজে লাগতে পারে৷ মার্কিন এনজিও আইডিআইএন-এর সহায়তায় মাশাবা একটি গ্রামে ছোট এক ‘ইনোভেশন সেন্টর' গড়ে তুলেছেন৷ সেখানে ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় সমাজের মানুষের সঙ্গে কাজ করেন৷ তাঁরা এমন সব যন্ত্রপাতি তৈরি করতে চান, যা নতুন ছোট আকারের ব্যবসায় মুনাফা আনতে পারে৷ মাশাবা বলেন, ‘‘এটা হলো ‘মেকার স্পেস', যার ধারণা আমরা ২০১৫ সাল নাগাদ সৃষ্টি করেছিলাম৷ এখন এটি আসল প্রকল্পের রূপ নিয়েছে৷ স্যান সম্প্রদায়ের মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মৌলিক জ্ঞান আয়ত্ত করে ওয়ার্কশপে নানা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে এবং নিজেদের জীবনযাত্রার নানা সমস্যার সমাধান খুঁজছে৷''
এই মুহূর্তে একদল মার্কিন ছাত্রছাত্রী ‘ইনোভেশন সেন্টার'-এ থাকতে এসেছেন৷ স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিলে বস্টন শহরের বাসিন্দা শ্যানন ম্যাককয় সস্তার হুইলচেয়ার তৈরি করছেন, যা সেখানকার রুক্ষ পরিবেশের উপযোগী৷ সেই অঞ্চলের বয়স্ক মানুষের জন্য এই উদ্ভাবন উপকার বয়ে আনবে৷ এমআইটির ছাত্রী শ্যানন ম্যাককয় বলেন, ‘‘এই ডিজাইন বালুর উপরে হুইলচেয়ার চালাতে সহায়ক হবে৷ তাই আমরা তার শক্তি বাড়াতে চেন ও গিয়ার লাগিয়ে সেটিকে আমরা হ্যান্ড সাইকেলে পরিণত করেছি৷ দুটি করে চাকা লাগিয়ে বালুর উপর চালানো সহজ করার চেষ্টা করেছি৷''
এখনো এই প্রকল্প প্রোটোটাইপ স্তরে রয়েছে৷ চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এমন এক ডিজাইন তৈরি করা, যার সাহায্যে স্থানীয় মিস্ত্রীরা হুইলচেয়ারকে সেখানকার পরিবেশের জন্য উপযুক্ত করে তোলার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন৷ তাবিসো মাশাবা বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষদের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল না করে তুলে তাদের উদ্ভাবন ও ব্যবসার সম্ভাবনায় মদদ দেওয়া উচিত৷ সঠিক সহায়তা পেলে তারা বৎসোয়ানার অর্থনীতিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন৷, যাতে ধাতুর উপর নির্ভর না করে জ্ঞানের ভিত্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷''
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন উদ্ভাবন নেটওয়ার্কের সঙ্গে মিলে মাশাবা বৎসোয়ানার অন্যান্য অঞ্চলেও এমন আরও ‘মেকার স্পেস' তৈরি করতে চান৷
স্টেফান ম্যোল/এসবি