লংগদুতে আদিবাসীদের বাড়িঘরে আগুন
২ জুন ২০১৭বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নয়ন (৩৫)-এর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ লাশটি উদ্ধার করা হয় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার চার মাইল এলাকা থেকে৷ স্থানীয় পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যায়৷ এরপর থেকেই লংগদু উপজেলা সদরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়৷
শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে লাশ নিয়ে আসা হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে৷ লাশ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়৷ সকাল ১০টার দিকে লংগদু সদরের তিন টিলা এলাকায় মিছিল পৌঁছালে কোনও উসকানি ছাড়াই জনসংহতি সমিতির অফিসসহ এলাকার বাড়িঘর ও দোকানগুলোতে আগুন দেয়া হয়৷ চালানো হয় লুটপাট৷
জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আগুনে প্রায় দুশ’ ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷’’ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি৷
লংগদু উপজেলার আটারকছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিক্ষোভ মিছিলের সময় প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে তাঁরা ঘর-বাড়িতে ছিলেন৷ তারপরও তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ায় তাঁরা সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন৷ এ সময় আগুনে পুড়ে গুনমালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধ নারী মারা গেছেন বলে জানান তিনি৷
জনসংহতিসমিতির লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা তিনশ’রও বেশি হবে৷ চারটি পাড়ার প্রায় সব বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷’’
তিনি দাবি করেন, গুণমালা চাকমা নিহত হওয়া ছাড়াও আরো দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন৷
লংগদু থানার ওসি মো. মোমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এই হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে৷ ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালকরা পাশের গ্রাম থেকে এসে এই হামলা এবং ভাংচুর চালায়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘নিহত নুরুল ইসলাম যুবলীগ নেতা হলেও তিনি পেশায় একজন ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালক৷ তার সহকর্মীরাই নাশকতা চালিয়েছে৷’’ তবে ওসি এক নারীর মৃত্যুর খবর সত্য নয় বলে দাবি করেছেন৷
এদিকে ওই এলাকার আদিবাসীরা ভয়ে অন্যত্র চলে গেছেন৷তাঁরা আবারও হামলার আশঙ্কা করছেন৷ স্থানীয় সাংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া জানান, ‘‘এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করায় লোকজন রাস্তাঘাটে তেমন নেই৷ পরিস্থিতি থমথমে৷ অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷’’
ওসি আদিবাসীদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘তাঁদের ঘর-বাড়ি সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ থাকবে কোথায়? তাই তাঁরা পাশের গ্রামে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন৷’’
এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷