আইসবার্গ থেকে বিয়ার!
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪উত্তর অ্যামেরিকার পূর্বতম অংশটির নাম হলো কেপ স্পিয়ার্স, যা কিনা নিউফাউন্ডল্যান্ডের অংশ৷ এখানে প্রতিবছর লাগে আইসবার্গ, অর্থাৎ হিমশৈলের মেলা৷ এখানকার রুক্ষ, তুষারাবৃত প্রকৃতি রয়েছে এড কিন-এর রক্তে, কেননা তিনি জাহাজের ক্যাপ্টেন৷ তাঁর ঊর্ধ্বতন পাঁচ পুরুষের মতো৷
বংশধারা অনুযায়ী আগে মাছ ধরতেন, আজ ধরেন আইসবার্গ! আর সেই হিমশৈলের বরফ গলা পানি বেচেন বিয়ার তৈরির ব্রুয়ারিগুলোর কাছে৷ এড কিন জানেন, ‘‘বাতাস ও জোয়ারভাটার উপর নির্ভর করে, আইসবার্গগুলো কখন ভেসে উঠবে৷ হয়ত মে মাসে৷ কোনো কোনো বছর বেশি, কোনো কোনো বছরে আইসবার্গগুলো তাড়াতাড়ি গলে যায়৷ তবে কোনো দু'বছর একরকম হয় না৷ এ বছরটা আইসবার্গের পক্ষে ভালো৷''
‘শৈলশিকার'
এড কিন-এর জাহাজটার নাম ‘গ্রিন ওয়াটার্স', এককালে ছিল জেলেনৌকা৷ ২০০৭ সালে এড সেটিকে কিনে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বদলিয়ে নেন৷ এবার তিনি মাল্লাদের নিয়ে এ মরশুমে এই প্রথমবার আইসবার্গ ধরতে চলেছেন৷ বাতাস কম, সমুদ্র শান্ত, এড খুঁজছেন আইসবার্গ৷
আইসবার্গ বা হিমশৈলের প্রধান অংশটা ঢাকা থাকে জলের তলায়৷ আইসবার্গের বরফ অন্তত ২০ হাজার বছরের পুরনো৷
পরের দিন এড আবার বেরিয়েছেন জাহাজ নিয়ে, তবে এবার উপকূলের কাছেই৷ জাহাজে রাখা হয়েছে মাছ ধরার, মানে কিনা আইসবার্গ ধরার জাল৷ গোটা হিমশৈলটার চারপাশে জাল জড়াতে হবে৷ দোদুল্যমান পাটাতন থেকে খুব সহজ কাজ নয়, কিন্তু এড-এর সম্বল তাঁর অভিজ্ঞতা৷ ১৯৯৭ সাল যাবৎ তিনি এই কাজ করছেন৷
'গ্রিন ওয়াটার্স' জাহাজটি এসে বরফ পাটাতনে তুলবে৷ হাইড্রলিক ক্রেন দিয়ে আইসবার্গগুলোকে জাহাজের পাটাতনে তোলা হয়৷ মাল্লাদের মনমেজাজ খুশি৷ আগস্ট মাস আসার আগে তারা বিশ লাখ লিটার বরফ-পানি বেচবে – ২০১৩ সালের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ বেশি৷
বরফ-পানির খদ্দের
নিউফাউন্ডল্যান্ডের রাজধানী সেন্ট জন্স-এর কাছে একটি ব্রুয়ারি এড কিন-এর আইসবার্গ গলা পানির মূল খরিদ্দার৷ মাস্টার ব্রুয়ার এইনার হলটেট এই মহামূল্য পানি দিয়ে বছরে আড়াই লাখ লিটার বিয়ার তৈরি করে থাকেন৷ আইসবার্গের পানি দিয়ে তৈরি বিয়ার খুব ভালো বিক্রি হয় বলে জানালেন তিনি৷ ৪৪ বছর বয়সি মাস্টার ব্রুয়ার কোম্পানির নিজস্ব পরীক্ষাগার ঘুরিয়ে দেখালেন, যেখানে তিনি বিয়ার তৈরির নানা উপাদানের গুণগত মান পরীক্ষা করেন৷ হলটেট জানালেন, ‘‘আমি এখানে পানিতে গুলে থাকা ধাতু কিংবা ময়লার খোঁজ করছি৷ এই পানিটা খুব শুদ্ধ৷ এর প্রতি দশ লাখ ভাগে মাত্র আট ভাগ ধাতব পদার্থ আছে – যার অর্থ এই পানি অতি শুদ্ধ৷''
আইসবার্গ বিয়ারের এমনই চাহিদা যে, হলটেট-এর ব্রুয়ারি তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে৷ আইসবার্গ বিয়ার প্রধানত নিউফাউন্ডল্যান্ডে বিক্রি হয়৷ আগামী বছরগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইসবার্গ ভেসে উঠবে কিনা, তা নিয়ে এড কিন-এর কোনো মাথাব্যথা নেই৷ নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে আইসবার্গের কোনো অভাব ঘটবে না, বরং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার ফলে তাদের সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না৷