অলিম্পিক: করোনা রেকর্ড করতে দিল না তাকিশিমাকে
২৯ জুলাই ২০২১তার নাম কুজোনরি তাকিশিমা। ইচ্ছে ছিল বিশ্বরেকর্ড করার। কিন্তু বাদ সাধল করোনা। বাদ সাধল দর্শকহীন অলিম্পিক করার সিদ্ধান্ত। তাই গত ১৫ বছর ধরে প্রতিটি অলিম্পিকের আসরে উপস্থিত থাকলেও এবার টোকিও অলিম্পিকের আসরে দর্শকের আসনে নেই তিনি। ফলে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবার যখন তিনি অলিম্পিকের আসরে দর্শক হিসাবে হাজির হন, তখন তার চুল রাঙিয়ে নেন অলিম্পিক রিংয়ের রঙে। রিওতে তার চুলের রঙ ছিল সবুজ। এবারও তিনি তার চুল লাল করেছিলেন। জাপানি অ্যাথলিটদের সমর্থনে গলা ফাটাবার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছিলেন। টিকিটও কেনা হয়ে গেছিল। হোক্কাইডো থেকে তিন বন্ধুকে তার টোকিওর বাড়িতে আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছিলেন। যাতে তারা অলিম্পিক দেখতে পারেন, উত্তেজনার আঁচ পেতে পারেন এবং পরবর্তী অলিম্পিকের আসরে তার সঙ্গী হন।
স্টেডিয়ামে গিয়ে অলিম্পিক দেখা হয়নি। তাও তাকিশিমার বন্ধুরা এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তার বাড়িতে এসেছেন। তাকিশিমার বন্ধু সোকো ফুসিমোতো বলছিলেন, ''তাকিশিমা অলিম্পিক বলতে পাগল। আমি এটা একেবারেই বুঝি না। কিন্তু আমার তাকিশিমার এই মনোভাব ভালো লাগে। তাই আমি তাকে সমর্থন করতে চাই।''
তাকিশিমা ৩৫ হাজার ইয়েন দিয়ে ২৮টি প্রতিযোগিতার ১৯৭টি টিকিট কেটেছিলেন। নিজের, আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য। কিন্তু এখন তাকে টিভির পর্দায় অলিম্পিক দেখতে হচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে বসেই টিভি দেখছেন তিনি।
অলিম্পিক নিয়ে তাকিশিমার উন্মাদনা জেগেছিল ১৫ বছর আগে। তিনি প্রথমে একটি আইস স্কেটিং প্রতিযোগিতা দেখেন। তার শব্দ, গতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে মুগ্ধ করে। তারপরই ২০০৬-এর উইন্টার অলিম্পিক দেখতে যান তিনি। সেই শুরু। সেখানে জাপানের অ্যাথলিট আরাকাওয়ার সোনা জেতা দেখে আপ্লুত হন।
তাকিশিমা বলছিলেন, ''অ্যাথলিটরা এতটা পরিশ্রম করে, প্রতিটি জেতা বা হারার পিছনে থাকে হাসি, আনন্দ, চোখের জলের কাহিনি, তা আমাকে স্পর্শ করে। আমাকে প্রেরণা জোগায়।''
তাকিশিমা একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। ৪৫ বছর বয়সি তাকিশিমা সাতটি অলিম্পিক দেখেছেন। ১০৬টি প্রতিযোগিতায় তিনি হাজির থেকেছেন। তিনি বলছিলেন, ''প্রতিটি অলিম্পিকের আসর আলাদা। তার রূপ, রস গন্ধ আলাদা। তাই কোনো একটিকে বিশেষ বলে চিহ্নিত করতে পারব না।''
অলিম্পিকের সময় তিনি বেশিক্ষণ ঘুমোন না। যত বেশি সম্ভব ইভেন্ট দেখেন। টোকিও অলিম্পিকের আসরে হাজির থাকতে পারলে তিনি ১৩৪টি ইভেন্টে থাকার রেকর্ড করে ফেলতে পারতেন। গিনেসে নাম উঠে যেত তার। কিন্তু নিজের শহরে রেকর্ড করতে পারলেন না তিনি। তাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে পরের অলিম্পিকের জন্য।
সারা উইরটজ/জিএইচ