কাঠকুড়ানি মেয়ের অলিম্পিক পদকের কাহিনি
২৬ জুলাই ২০২১এ যেন এক রূপকথার গল্প। মণিপুরের নংবক কাকচিং গ্রামের কাঠকুড়ানি মেয়ের গল্প। যে জঙ্গল থেকে অনায়াসে ভারী কাঠের বোঝা বয়ে নিয়ে আসত বাড়িতে। আনত পানীয় জল। পাঁচ বছর আগে রিও অলিম্পিকে চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছিল ইভেন্ট শেষ করতে না পারার জন্য। পরে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন তিনি। ভাবা হয়েছিল, তিনি আর ওয়েটলিফটিং করতেই পারবেন না। কিন্তু মনের জোর, সমানে চেষ্টা করা এবং লেগে থাকার নাছোড় মানসিকতার পুরস্কার পেলেন সাইখোম মীরাবাই চানু। টোকিও অলিম্পিকের দ্বিতীয় দিনে ওয়েটলিফটিংয়ে মেয়েদের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপো জিতে নিয়েছেন চানু।
ছোটবেলা থেকেই চানুর শক্তি ছিল অন্যদের তুলনায় বেশি। যে কাঠের বোঝা তার দাদা তুলে আনতে পারত না, চানু তা অনায়াসে বাড়ি নিয়ে আসত। চানুর পছন্দের খেলা ছিল তীরন্দাজি। কিন্তু বাবা-মা-র কথায় ১২ বছর বয়সে ভারোত্তোলনের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তারপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। ২০১৪-তে কমনওয়েলথ গেমসে রুপো পান তিনি।
কিন্তু বড় ধাক্কা রিওতে। অলিম্পিকের আসরে তিনি ক্লিন ও জার্ক বিভাগে তিনবারই ওজন তুলতে পারেননি। তার নামের পাশে লেখা ছিল ডিএনএফ(ডিড নট ফিনিশ)। তবে তারপর তার ঘুরে দাঁড়াতে মাত্র এক বছর লেগেছিল। ২০১৭-তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা পান। গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা। জাতীয় রেকর্ড করলেন। তারপর টোকিওতে ইতিহাস গড়লেন। তার আগে দুই মাস তিনি অ্যামেরিকার সেন্ট লুইসে কঠোর অনুশীলন করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি ফিরেছেন চানু। তবে তিনি তারপর যাবেন মণিপুরে নিজের বাড়িতে। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, বাড়ি ফেরার জন্য তর সইছে না। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী তাকে এক কোটি টাকা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে চানু রেলের টিকিট পরীক্ষক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চানুকে আর টিকিট পরীক্ষা করতে হবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তার জন্য চমক অপেক্ষা করে আছে।
কাঠকুড়ানি মেয়ের অলিম্পিকে রুপো জয়ের রূপকথার গল্প এখনও শেষ হয়নি। আগামী দিনে সম্ভবত তাতে আরো অনেক চমক থাকবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)