জুডোয় রুপো জেতা ইরানি ক্রীড়াবিদের কাহিনি
২৮ জুলাই ২০২১নিপ্পন বুদোকান হলো জাপানের মার্শাল আর্টের কেন্দ্র। বিশেষ করে জুডোর। ১৯৬৪ সালে টোকিও গেমসে জুডো চালু হয়। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই নিপ্পন বুদোকানের কিতানোমারু পার্কের আটকোণা মার্শাল আর্ট কেন্দ্রের নামডাক। এই কেন্দ্র হলো শক্তি ও শান্তির প্রতীক।
ইরানের ক্রীড়াবিদ এবং এবার টোকিও অলিম্পিকে জুডোয় রুপো পাওয়া ইরানি অ্যাথলিটের কাছেও এই জায়গার মাহাত্ম্য অপরিসীম। রুপো পাওয়ার পর তিনি ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ''আমি এই মেডেল প্রথমত নিজেকে, তারপর আমার পরিবারকে এবং যারা আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের উৎসর্গ করতে চাই।''
৮১ কিলোগ্রাম বিভাগে তিনি ফাইনালে জাপানের তাকানোরি নাগাসের কাছে হেরে যান।
কেন তিনি ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদের সঙ্গে লড়েননি?
বুদোকান, যেখানে অলিম্পিকের জুডোর আসর বসেছিল, সেই জায়গা ইরানি ক্রীডা়বিদের কাছে অপরিচিত নয়। ১১ হাজার দর্শক এখানে জুডোর প্যাঁচ উপভোগ করতে পারেন। এখানেই তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে হেরে গেছিলেন। এই হারই তার জীবন বদলে দিয়েছিল।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চলার সময়ই তার কোচ ইরানের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে ফোন পান। সেখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছিল, আর জেতার দরকার নেই। কারণ, জিতলে ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদের মুখোমুখি হতে হবে। ইরানের ক্রীড়াবিদরা কোথাও ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না। কারণ, ইরান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতিই দেয় না। তা সত্ত্বেও তিনি লড়েছিলেন এবং সেই রাউন্ডে জিতেছিলেন।
কিন্তু সেমিফাইনালে তিনি যখন ওয়ার্ম আপ করছেন, তখন ইরান দূতাবাসের এক কর্মী তার কাছে আসেন। দূতাবাস কর্মী বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই তার বাড়িতে বাবা-মার কাছে পৌঁছে গেছে। এই অবস্থায় তিনি লড়াইয়ে নামেন এবং বেলজিয়ামের প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হেরে যান। ফাইনালে তাকে ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হয়নি।
পরে মোলাই বলেছিলেন, ''আপনাকে জীবনে সাহসী হতেই হবে। কিন্তু আমি যখন লড়ছি, তখন হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছে। বারবার আমার পরিবারের কথা মনে হচ্ছে। তাই আমি নির্দেশ মেনে নিই।'' সেবার ইসরায়েলের মুকি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।
কেন মঙ্গোলিয়ার হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
ইনস্টাগ্রামে মুকিকে অভিনন্দন জানান মোলাই। মুকি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ''আপনি ব্যক্তি হিসাবে এবং অ্যাথলিট হিসাবে আমাদের প্রেরণা।'' কিন্তু এর ফলে ইরানের শাসকরা রেগে যান। কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর তিনি জার্মানি চলে যান। তখন মনে হচ্ছিল তার অলিম্পিক মেডেলের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। কারণ, তার দেশ আর তাকে অলিম্পিকে পাঠাবে না।
ইন্টারন্যাশনাল জুডো ফেডারেশন তখন মোলাই-কে সমর্থন করে। তারা বলে মোলাই অন্য কোনো দেশের হয়ে নামতে পারেন অথবা শরণার্থীদের দলে থাকতে পারেন। তখন মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট তাকে সেদেশের হয়ে অলিম্পিকে নামার প্রস্তাব দেন। তিনি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
ফেব্রুয়ারিতে তিনি ইসরায়েল গেছিলেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ১৯৭৯-র পর এই প্রথম কোনো ইরানি ইসরায়েলে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিল। মোলাই-র এখন মঙ্গোলিয়ার পাসপোর্ট আছে। কিন্তু ইরানের আইন বলে, সেদেশের নাগরিকত্ব খারিজ হয় না।
টোকিওর রুপো বিজয়ী ক্রীড়াবিদের বক্তব্য, ''আমি খুশি। কারণ, আমি আর পাঁচটা ক্রীড়াবিদের মতো বাঁচতে পারছি। আমি স্বাধীন। আমার কোনো সমস্যা নেই। কোনো রাজনীতির মধ্যে নেই। আমি একজন ক্রীড়াবিদ মাত্র।'' টোকিও আসার আগে তিনি দুই মাস ইসরায়েলে গিয়ে মুকির সঙ্গে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তারা এখন ভালো বন্ধু।
সারা ওয়েইটজ/জিএইচ