অর্জুনের তির ছিল পরমাণু অস্ত্র, বললেন ধনকড়
১৫ জানুয়ারি ২০২০প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিক্রম দেব, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের দলে এ বার যোগ দিলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়৷ বললেন, রামায়ণ-মহাভারতের সময়ে এ দেশে টাইম মেশিন ছিল৷ আর অর্জুন যে তির ব্যবহার করতেন, তা ছিল পরমাণু অস্ত্র৷
মঙ্গলবার থেকে কলকাতার বিড়লা মিউজিয়ামে শুরু হয়েছে বিজ্ঞান মেলা৷ দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীরা তাতে উপস্থিত হয়েছেন৷ তারই উদ্বোধনে গিয়ে ধনকড় বলেন, ''প্রাচীন ভারত বিজ্ঞানে খুব উন্নত ছিল। সেখানে টাইম মেশিন ছিল৷ পরমাণু অস্ত্র ছিল৷'' এখানেই থেমে না থেকে, নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ব্যাখ্যাও দেন ধনখড়৷
ধনকড় অবশ্য প্রথম ব্যক্তি নন৷ এ হেন অবান্তর কথা এর আগে বলেছেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ভারতেই প্রথম প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছিল৷ গণেশের নাকে হাতের শুঁড় তারই প্রমাণ৷ রামায়ণের পুষ্পক রথকেই প্রথম বিমান বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি৷ এখানেই শেষ নয়, মোদীর পথ অনুসরণ করে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব কিছু দিন আগে বলেছিলেন, মহাভারতের কাহিনি যে ভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে না গিয়েই ধৃতরাষ্ট্রকে শুনিয়েছিলেন সঞ্জয়, তা থেকে প্রমাণ হয় সে সময় ইন্টারনেট ছিল৷ আর মাত্র কিছু দিন আগে তো দিলীপ ঘোষ গরুর দুধে সোনার সন্ধান পেয়েছেন৷ এ বার ধনকড়ও সেই দলে যোগ দিলেন৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে ধনকড় আসার পর থেকেই শাসক দল তৃণমূল অভিযোগ করছে, তিনি বিজেপির নেতাদের মতো কথা বলছেন৷ তাঁর আচরণও রাজনীতি নিরপেক্ষ নয়৷ বস্তুত, ধনখড়ের অতীত রাজনীতির সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে৷ কিন্তু রাজ্যপাল হিসেবে কি তিনি বিজেপির কথা বলতে পারেন?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ধনকড় যা বলেছেন সেটাই দেশ জুড়ে প্রচারের চেষ্টা করছে বিজেপি৷ বলার চেষ্টা করছে, মোগল ভারতের চেয়ে প্রাচীন ভারত অনেক বেশি উন্নত ছিল৷ মুসলিম শাসকরা এসে সব নষ্ট করে দিয়েছে৷
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের এ বিষয়ে মন্তব্য, ধনখড়ের এই মন্তব্য শুধু হাস্যকর নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীন৷ এর থেকেই বোঝা যায়, ইতিহাসের কোনও বোধই নেই তাঁর৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বহু বিজ্ঞানীও ধনকড়ের এই কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য, এ ধরনের সমাবেশে যাঁরা আসেন, তাঁরা উবাচ শুনে সময় নষ্ট করতে চান না৷ ধনখড় যা বলেছেন, তার ঐতিহাসিক কিংবা বিজ্ঞানসম্মত কোনও ব্যাখ্যা নেই৷ মনগড়া কথা জনসমক্ষে না বলাই ভাল৷ বিশেষ করে রাজ্যপালের চেয়ারে বসে৷
এসজি/জিএইচ (টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস)