1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যাদবপুর ঢুকতে দিলো না রাজ্যপালকে

২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাতে পৌঁছাল যাদবপুর। তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হলো না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছাত্ররা জানিয়ে দিলো তাঁকে তাঁরা আচার্য হিসেবে মানছেন না।

https://p.dw.com/p/3VIKi
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বছর শেষের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতেই দেওয়া হল না রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনখড়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে কালো কাপড় দেখিয়ে আটকে দেওয়া হল রাজ্যপালের গাড়ি। বলা হল, যে ভাবে সিএএ-র পক্ষে সওয়াল করছেন রাজ্যপাল এবং দেশ জুড়ে ছাত্রদের উপর পুলিশি তাণ্ডবের ঘটনায় নীরব থেকে বিষয়টি কার্যত সমর্থন করছেন, তারপর তাঁর কাছ থেকে সমাবর্তনের সার্টিফিকেট নেওয়া সম্ভব নয়। ছাত্রদের এই আচরণে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপালও। জানিয়েছেন, ছাত্রদের এই আচরণে তিনি ব্যথিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। 

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল রাজ্যপালের। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পৌঁছলে ছাত্ররা জানিয়ে দেন, রাজ্যপালের উপস্থিতিতে কোনও অনুষ্ঠান তাঁরা মানবেন না। রাজ্যপাল এর পর ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে চান। খোলামেলা আলোচনা সভায় সিএএ, এনআরসি এবং জামিয়া মিলিয়া সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশি তাণ্ডবের বিষয়ে ছাত্ররা তাঁকে প্রশ্ন করেন। ধনখড়ও নিজের মতো করে উত্তর দেন। এরপরেই মঙ্গলবার সকালে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন ছাত্রদের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে ছাত্ররা লেখেন, রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনে হয়েছে তিনি দেশ জুড়ে যা ঘটছে তা সমর্থন করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তাঁরা রাজ্যপালকে মানছেন না। তাঁরা চান, রাজ্যপাল যেন ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবেও তাঁরা জগদীপ ধনখড়কে আর মানছেন না। মাত্র দু দিন আগে একই ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সেখানে উপাচার্যকে খোলা চিঠি দিয়ে পদত্যাগের কথা বলা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ভারতের আইন অনুযায়ী যে কোনও রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন সে রাজ্যের রাজ্যপাল।

Indien Protest gegen Saffronisation
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

পরিস্থিতি উত্তপ্তই ছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সমাবর্তনে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছন রাজ্যপাল। কিন্তু গেটের বাইরে তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে পথ অবরোধ করেন ছাত্র ও অশিক্ষক কর্মীরা। প্রায় ৫০ মিনিট সেখানেই আটকে থাকে রাজ্যপালের কনভয়। গাড়িতে বসেই টুইট করেন ধনখড়। জানান তাঁর বিরক্তির কথা। শেষ পর্যন্ত গেটের বাইরে থেকেই ফিরে যেতে হয় রাজ্যপালকে। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে ফের একবার নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন রাজ্যপাল। ছাত্রদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেননি উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। যদিও সুরঞ্জনবাবু রাজ্যপালকে আগেই জানিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা তাঁকেও রাজ্যপালের গাড়ির সামনে যেতে দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত নতুন নয়। ধনখড় পশ্চিমবঙ্গে আসার কিছু দিনের মধ্যেই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক গোলমাল হয়। সেই ঘটনায় আচমকাই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে বাবুলের পাশে দাঁড়ান রাজ্যপাল। তার পর থেকেই একের পর এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছে রাজ্যপালের। তবে মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটল, তা নজিরবিহীন। বিশেষত দেশ জুড়ে গণ বিক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷