1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনেক চেষ্টাতেও জামিন মিলছে না কাজলের

১ জুলাই ২০২০

দুই মাস ধরে কারাগারে আছেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। মুক্তি না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হতাশ। বারবার আবেদন করেও জামিন মিলছে না। কারাগারে তার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/3edsM
৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলে পাওয়া যায় ফটো সাংবাদিক কাজলকে।
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol

৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলে পাওয়া যায় ফটো সাংবাদিক কাজলকে। বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর হয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই দিন যাশোরের আদালত অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন দিলেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তার বিরুদ্ধে আগেই ডিজিটাল আইনে মামলা ছিল। ওই দিন আদালতে ডিজিটাল মামলার কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়নি

কাজলকে প্রথমে যশোর কারাগারে রাখা হলেও ২২ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

এরই মধ্যে কাজলকে ডিজিটাল আইনের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। একটি মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তার জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে। করোনার কারণে এই আইনি প্রক্রিয়াগুলো ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে হচ্ছে। কাজলকে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হচেছ না।

রিপন কুমার বড়ুয়া

২৩ জুন তাকে শেরেবাংলা নগর থানায় সংসদ সদস্য (মাগুরা-১) সাইফুজ্জামান শিখরের দায়ের করা ডিজিটাল আইনের মামলায় ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তার দেখায়। ওই দিন তার জামিনের আবেদনও করা হয়। কিন্তু তিনি জামিন পাননি। ২৮ জুন হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা আরো একটি ডিজিটাল মামলায় ট্রাইব্যুনাল তাকে গ্রেপ্তার দেখায় । তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় আর জামিন আবেদন নাকচ করা হয়। এই মামলার বাদী ওসমিন আরা বেলি। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর অভিযোগ একই রকম। যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত একটি খবর ফেসবুকে শেয়ার করার অভিযোগ।

কাজলের আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া জানান, ‘‘মামলাগুলো জামিন অযোগ্য। কিন্তু কাজলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তাই তার জামিন প্রাপ্য। কারণ, তিনি ফেসবুকে দৈনিক মানবজমিনের যে প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন তাতে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের নাম নেই। মাগুরায় দুইটি সংসদীয় আসন আছে। কোন আসনের এমপি তাও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। আর পাপিয়া যে অপরাধী তা তো প্রমাণিত। তাই যদি না হবে তাহলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে কেন?”

শেরেবাংলা নগর থানায় সংসদ সদস্যের মামলায় কাজল এবং মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ মোট ৩২জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে কাজল গ্রেপ্তার হলেও মতিউর রহমান চৌধুরী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

কামরাঙ্গিরচর থানায় একই ইস্যুতে কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের আরেকটি মামলা আছে। সেই মামলায় এখনো তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

জুলিয়া ফেরদৌসী

কাজলের পরিবার দাবি করছে, কাজলের সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। কারাগারে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী বলেন, ‘‘আমরা বারবার তার জামিনের আবেদন করছি। কিন্তু তাকে জামিন দেয়া হচেছ না। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। কবে জামিন হবে তা নিশ্চিত নয়। আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও কাজলের বিষয় নিয়ে দেখা করেছিলাম।”

ডিজিটাল আইনে ছয় মাসে ২৩ সাংবাদিক গ্রেপ্তার

বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল ১৯-এর তথ্য মতে বাংলাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১১টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ৩১ টি মামলায় ৫৩ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এই আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৩ জন সাংবাদিককে। কয়েকজন সাংবাদিক জামিন পেয়েছেন। কিন্তু ঠিক কত জন সাংবাদিক জামিন পেয়েছেন তার হিসাব নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে।

এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশে সরকারের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার বেড়ে গেছে। ডিজিটাল আইনের অপব্যাবহার করে তাদের আটকে রাখা হচ্ছে বলেও মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

ডিজিটাল আইন বাতিল চায় সম্পাদক পরিষদ

বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়ে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা এমন এক ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে স্বাভাবিক সাংবাদিকতার কাজও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তাই অবাধ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিনষ্ট ও গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর পুলিশের ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ নিয়ে সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।