1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবিক কারণে বাবাকে জামিন দিন

শামীমা নাসরিন
৪ মে ২০২০

দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর খোঁজ মেলা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ছেলে মনোরম পলক দেশ জুড়ে করোনা সংকটের এই সময়ে তার বাবাকে কারাগারে না রেখে জামিন দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3bl85
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol

ডয়চে ভেলের সঙ্গে টেলিফোনে বাবাকে নিয়ে কথা বলার সময় পলক বলেন, ‘‘দেশে এখন যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে তাতে কারাগারে সামাজিক দূরত্ব কতটা বজায় রাখা সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না৷ তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন, দয়া করে আমার বাবাকে জামিন দিন৷  প্রয়োজনে আমরা পুরো পরিবার কোয়ারান্টিনে থাকতে রাজি আছি৷’’

নিখোঁজ হওয়ার ৫৩ দিন পর শনিবার গভীর রাতে বেনাপোলের রঘুনাথপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়৷ পরে জানা যায় ওই ব্যক্তি ঢাকা থেকে নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল৷

গত ১০ মার্চ কাজলের খোঁজ মিলছে না জানিয়ে প্রথমে ঢাকার চকবাজার থানায় জিডি ও পরে মামলা করেন তার ছেলে পলক৷

বাবাকে উদ্ধারের খবর পাওয়ার বিষয়ে পলক বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে অচেনা নম্বর থেকে আমার ফোনে একটি ফোন আসে৷ ধরার পর ওপার থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রথমে আমার পরিচয় জানতে চায়৷ আমি নিজের পরিচয় দিলে আমার কাছে বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতে চান৷ আমি জিডি করার কথা জানালে ওনারা নিশ্চিত হওয়ার পর বাবার কাছে ফোন দেন৷

‘‘বাবা ফোন হাতে নিয়ে আমাকে বলেন, ‘বাবা আমি বেঁচে আছি, তোমারা তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসো’৷ আমরা রাতেই ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে যাই৷’’  

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই হাত পেছনে দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে শফিকুল ইসলাম কাজলকে যশোর আদালতে আনে পুলিশ৷

কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা করেছে বিজিবি৷ সেই মামলায় পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করে বলে জানান আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এএসআই সুবোধ ঘোষ৷

কাজলের আইনজীবী বিজিবির করা ওই মামলায় জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন৷

কিন্তু বিজিবির মামলায় জামিন হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪ ধারায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় কাজলকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মঞ্জুরুল ইসলাম৷

পুলিশের করা এ মামলার বিষয়ে কাজলের ছেলে বলেন, হঠাৎ করে মামলা করায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে জামিনের আবেদন করতে পারিনি৷ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সাধারণ ছুটির কারণে এখন তো আদালত বন্ধ রয়েছে৷ আমরা আদালত খোলার অপেক্ষায় আছি৷  আদালত খুললেই প্রথমে আমরা জামিন আবেদন করবো৷

কাজলের আইনজীবী দেবাশীষ দাসকে উদ্ধৃত করে তার সহকারী শিক্ষানবিস আইনজীবী সুদীপ্ত ঘোষ সাংবাদিকদের রোববার বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ কাজলের বিরুদ্ধে বিজিবির করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা ছাড়াও রাজধানীর তিনটি থানায় আরও তিনটি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করে৷ গত ৯, ১০ ও ১১ মার্চ যথাক্রমে শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গির চর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই তিনটি মামলা হয়। আদালত এই মামলা তিনটি সম্পর্কে কোনো আদেশ দেয়নি৷’’

ওই মামলা তিনটির বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে পলক বলেন, ‘‘আমরা এখনো মামলাগুলোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি৷ কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব৷ আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ এটাও জানি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়৷ আইন তার নিজের গতিতে চলবে৷ আমরা আইনানুযায়ী কাজ করবো৷’’

ফটো সাংবাদিক ও ‘দৈনিক পক্ষকাল’র সম্পাদক কাজল জীবিত উদ্ধার হওয়ায় তাঁর পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জানিয়ে পলক আরো বলেন, ‘‘বাবাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আনন্দ ভাষায় বোঝানো কঠিন৷ এ কটা দিন প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় আমাদের দিন কেটেছে৷ আল্লাহকে ধন্যবাদ, বাবা জীবিত আছেন৷ যদিও মানসিকভাবে তিনি খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন৷’’

বাবার সঙ্গে এতদিন পর দেখা হওয়ার মুহূর্তের বর্ণনায় পলক বলেন, ‘‘সময়টা খুবই ইমোশনাল ছিল৷ যদিও বাবা এবং আমি দুজনই মানসিকভাবে শক্ত থাকার চেষ্টা করেছি৷ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও বাবা শক্ত আছেন৷ তবে ওনার এখন পরিচর্যা দরকার৷ শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন৷ তাই আমি ওনাকে জামিন দেওয়ার আকুল  আবেদন করছি৷’’

কাজল বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন৷

গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পক্ষকাল’-এর অফিস থেকে বের হওয়ার পর কাজলের আর কোনও খোঁজ মেলেনি৷  তবে নিখোঁজের ঠিক ৩০তম দিনে (৯ এপ্রিল) সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি বেনাপোলেই চালু হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম৷

পুলিশও ফোন চালু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিল, ‘‘নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি চালু হয়েছিল৷ লোকেশন দেখিয়েছে বেনাপোল৷ তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ও নম্বরটি চালু থাকার সময় কম হওয়ায় বেনাপোলে কোনও অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি৷’’

২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...