পোশাক কারখানাগুলো পাবে ২৩ লাখ ডলার
২৩ জানুয়ারি ২০১৮বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বিবৃতিতে লেবার ইউনিয়নগুলো জানায়, হেগের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন এই রায় দিয়েছে৷ রায় অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ দিতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা যাবে না৷ ওই আদালতের রায়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ফ্যাক্টরিগুলোকে এর আগে যে টাকা দিতো, সেই টাকায় পোশাককর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না৷ আদালতের রায় অনুযায়ী, শ্রমঅধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর দাবি মেনে বাংলাদেশের ১৫০পোশাক কারখানা ভবনে আগুনসহ সব ধরনের নিরাপত্তার জন্য ২৩ লাখ মার্কিন ডলার দেবে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান৷
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাককর্মীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের কর্মী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নড়েচড়ে বসে পুরো বিশ্ব৷ ওই দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷
রানা প্লাজা ধসের পর একটি সমঝোতা তৈরি করা হয়৷ এতে ২০টি দেশের প্রায় ২০০টি নামি-দামি ব্র্যান্ড ওই সমঝোতা মেনে নেয়৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ২৫ লাখ কর্মীও এই চুক্তির আওতায়৷
কিন্তু ফ্যাক্টরিগুলোকে নিরাপত্তার জন্য যে টাকা দেয়া হতো সেই টাকায় পোশাককর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না৷ ইউনিয়নগুলো জানায়, কারখানাগুলোয় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ও ফায়ার এক্জিট পর্যাপ্ত ছিল না৷ বয়লার রুমের কাছ থেকে দাহ্য পদার্থগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী দূরে ছিল না৷
ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নের ক্রিস্টি হফম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এখন ১৫০টিরও বেশি কারখানায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে৷ অনেক বছর আগেই যেটা হওয়া উচিত ছিল৷ অবশেষে আমরা সেটা পেলাম৷''
বাংলাদেশে অ্যাকর্ড ফর ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটির আওতায় আর্বিট্রেশন প্রক্রিয়ায় এই সমঝোতা হয়৷ হফম্যান বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক এই ব্র্যান্ডগুলোকে অবশ্যই কারখানার ভবন নিরাপত্তায় কিছু অর্থ দিতে হবে৷ পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই অর্থ ব্যয় করবে তারা৷''
রায় অনুযায়ী, ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নের তহবিলে ৩ লাখ ডলার সহায়তা দেবে ওই প্রতিষ্ঠানটি৷ আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনে কাজ করা কর্মীদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে কাজ করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিঅল নামে ওই তহবিল গড়ে তুলেছে ইউনিয়নটি৷
ইউনিয়নগুলো এরকম বেশ কয়েকটি মামলা লড়ছে৷ এর মাঝে এই রায় তাদের জন্য উদাহরণ তৈরি করলো৷
বিবৃতিতে ইউনিয়নগুলো জানায়, চুক্তির পর্যবেক্ষকরা ২০০ ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৮০০টি কারাখানা পরিদর্শন করেছেন৷ এ সময় তারা ১ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ অগ্নি, বিদ্যুৎ ও কাঠামোগত বিপত্তি পরীক্ষা করেছেন৷
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট লেবার স্টাডিজের সুলতান উদ্দিন আহমেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘এর আগে ব্র্যান্ডগুলো কখনোই দায়িত্ব নিতে চায়নি৷ এমনকি এত দুর্ঘটনার পর কখনও দুঃখ প্রকাশও করেনি৷ এখন একটি ভালো উদাহরণ তৈরি হলো৷ কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আরও উন্নত হবে৷''
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালতের এই রায়কে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি৷ এখানে অ্যাকর্ড এরইমধ্যে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তণ এনেছে৷ তাদের দায়িত্ব হলো এর যারা সিগনেটরি, তাদের চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য করা৷ এই রায়ের ফলে এখন পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা নিশ্চয়ই শ্রমিকদের একটি বড় জয়৷ শ্রমিক সংগঠনগুলোর জয়৷ এখানে অর্থের পরিমানও বেঁধে দেয়া হয়েছে৷ তাই এটাকে বিশাল জয়ই বলা যায়৷''
আর বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন প্রশ্ন হলো, শ্রমিকরা কিভাবে উপকৃত হবেন৷ তাঁদের নিরপত্তার জন্য ১৫০টি পোশাক কারখানায় এই অর্থ ব্যয় হবে৷ তা কি মালিকরা করবেন, না সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধিও থাকবে? আরেকটি বিষয় হলো, শ্রমিকদের নিরাপত্তার কোন কোন দিক দেখা হবে? তাঁদের চিকিৎসার ব্যাপারে কি কিছু হবে? তারা কি ক্ষতিপুরণ পাবেন? এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হলে আরো ভালোভাবে বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে৷''