হাসেম ফুডসের অগ্নিকাণ্ডে সরকারি সংস্থারও ‘দায়'
৯ আগস্ট ২০২১ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ জানান, গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীর কাছ থেকে ৪৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন পেয়েছেন৷ "তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে অনিয়মসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনারোধে ২০ দফা সুপারিশ করেছে” বলে জানান তিনি৷
তদন্তে কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জামাদি না থাকা, শিশু শ্রমিক নিয়োগ, প্রশিক্ষিত অগ্নিনিবার্পনে জনবল না থাকা এবং ফায়ার সার্ভিসের এনওসি না পাওয়াসহ নানা অনিয়ম পাওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া তদন্ত দল মনে করছে সরকারি দুটি সংস্থা শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যথাযথভাবে মনিটরিং করলে এ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানো যেতো৷
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ বলেন, "কারখানার নীচ তলার সেন্ট্রাল কমপ্রেসার রুমের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়৷ "দাহ্য পদার্থ থাকাতে আগুন দ্রুত পুরো কারখানার ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে৷” শ্রমিকরা কারখানা ছাড়তে চাইলেও ‘চতুর্থ তলার ফ্লোরের ইনচার্জ শ্রমিকদের আগুন নিভে যাবে বলে তার রুমে নিয়ে যান'৷ পরে কর্মকর্তাসহ শ্রমিকরা রুম থেকে বের হতে না পারায় তাদের মৃত্যু হয়৷
সরকারি সংস্থার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্ট যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে মনিটরিং করতো, তাহলে সেখানে শিশু শ্রম থাকতো না, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোর্ডের অসঙ্গতি থাকতো না, ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকতো৷ সরকারি সংস্থাগুলোর মনিটরিং ঠিকঠাকভাবে করা হয়নি৷” কারখানাগুলোতে শিশুশ্রম বন্ধে মনিটরিং, শ্রম আইন অনুযায়ী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা এবং আহতদের আড়াই লাখ টাকা করে কারখানা মালিকের কাছ থেকে আদায় করে দেওয়ার সুপারিশের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এবং বিল্ডিং কোড মেনে কারখানা ভবন নির্মাণ, পর্যাপ্ত অগ্নি নিবার্পন সরঞ্জামাদি রাখা, প্রশিক্ষিত অগ্নিনিবার্পন দল রাখার সুপারিশ করা হয়েছে৷
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সংশ্লিষ্ট্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে, ‘তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে'৷
গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫১ জনের মৃত্যু হয়৷ এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ ৮ জনের নামে হত্যা মামলা করেন৷ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন'৷
পুলিশ অভিযান চালিয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে৷ দুই দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলের জামিন মঞ্জুর করে আদালত৷ কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহসহ তিনজন এখনো কারাগারে আটক৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)