সন্ধের পর কার নির্দেশে ময়না তদন্ত, উঠছে প্রশ্ন
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ভারতে নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর ময়নাতদন্ত করা যায় না। আরজি কর কাণ্ডে সে নিয়ম মানা হয়নি বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এবার সামনে এলো, তিলোত্তমার ময়নাতদন্ত নিয়ে এবার আরো কিছু গরমিল সামনে এসেছে। সূত্র জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত ঘিরে আরজি করে যে বোর্ড গঠন করা হয়েছিল রাতারাতি, সেখানে একজন সদস্য ২০২১ সালের একটি মেমো দেখিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেনো রাতে ময়না তদন্ত করা হবে? কেন দেহটি একদিন মর্গে রেখে পরদিন সকালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে না?
যে মেমোটি তিনি দেখিয়েছিলেন, তা ২০২১ সালে স্বাস্থ্য দপ্তরের জারি করা একটি নির্দেশিকা। সেখানে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে বিকেল চারটের পর ময়নাতদন্ত করা যাবে না।
আরজি কর কাণ্ডের পর হাসপাতালের সুপার একটি বোর্ড তৈরি করেন রাতারাতি। সেই বোর্ডেরই একজন সদস্য এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। অথচ তার আপত্তিকে গ্রাহ্যই করা হয়নি। ওই দিন সন্ধ্যাতেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ময়নাতদন্তে পাঠানোর জন্য যে চালান দেওয়ার কথা, সেই চালান ইস্যু করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আগেই প্রশ্ন তুলেছে। আগামী শুনানিতে রাজ্যকে সেই চালান দেখাতে বলা হয়েছে।
ডয়চে ভেলের হাতে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন টালা থানার এক সাব ইনস্পেক্টর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রধানকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছে, বিশেষ কারণে ওই দিন রাতেই ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন। ওই চিঠি ফরোয়ার্ড করেছিলেন টালা থানার ওসি। আরজি করের কর্মকর্তারাও চাইছিলেন রাতের মধ্যেই ময়নাতদন্ত হোক।
বস্তুত, এই ঘটনায় টালা থানার ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। মৃতার বাবা-মা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা চাওয়া সত্ত্বেও কেন মেয়ের দেহ একদিন সংরক্ষণ করা হলো না। আরজি করের মর্গেই দেহ সংরক্ষণ করা যেত বলে দাবি উঠছে। কিন্তু পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা করতে চায়নি বলে অভিযোগ।
টালা থানার ওই চিঠি সামনে আসায় তদন্ত নতুন মোড় পাবে বলে মনে করছেন আইনজীবী অরিন্দম দাস। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''এক এক করে বেশ কিছু নথি বাইরে আসছে। এই নথিগুলি আদালতে গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করছি। প্রতিটি নথি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, প্রাথমিক তদন্তে কিছু বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।''
মর্গের পরিস্থিতি
এদিকে আরজি কর মর্গের একাধিক অনিয়ম নিয়ে বুধবার একটি তদন্তমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সাংবাদিক শান্তনু ঘোষের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে সিভিক ভল্যান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আরজি করের মর্গে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সঞ্জয় নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত বলেও মনে করছে সিবিআই। অর্থাৎ, শবের সঙ্গে সহবাসের প্রবণতা ছিল তার। আরজি করের মর্গে ঢুকে সে সে কাজ করতো বলে মনে করছে সিবিআই। তার ফোন থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। একইসঙ্গে আশঙ্কা, আরজি করের মর্গ থেকে বেওয়ারিশ মৃতদেহ এবং দেহাংশ বিক্রি করা হতো। রেজিস্টারের সঙ্গে মর্গে রাখা দেহের সংখ্যার গরমিল আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাবেক আইপিএস অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এমন যদি সত্যিই হয়ে থাকে, সিবিআইয়ের তদন্তে যদি এই তথ্য উঠে আসে, তাহলে তার দায় কেবলমাত্র সঞ্জয় রাইয়ের উপর চাপিয়ে দিলে চলবে না। একজন সিভিক ভল্যান্টিয়ারের পক্ষে একা এই কাজ করা সম্ভব নয়। এর পিছনে বড় চক্র থাকতে বাধ্য। সেই চক্রের মাথাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।''
আইনজীবী অরিন্দম দাস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আরজি কর কাণ্ড কেবল একটি ধর্ষণ এবং খুনের মামলা নয়। এরসঙ্গে আরো অনেক কিছু জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট যে পথে মামলাটিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে অন্য মামলাগুলিও মূল মামলার নথি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে হচ্ছে।'' অর্থাৎ, বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনিয়মের সঙ্গে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার যোগসূত্র আছে কি না, তা তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অরিন্দম।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)