রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সিআইএসএফকে অসহযোগিতার অভিযোগ
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করলো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুপ্রিম কোর্টের কাছে করা আবেদনে বলা হয়েছে, আরজি কর হাসপাতালে সিআইএসএফ-এর যে কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে, তারা ভয়ঙ্কর অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। তাদের থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই এবং নিরাপত্তার জন্য ন্যূনতম জিনিসপত্র নেই। বাধ্য হয়ে উপায় না থাকায় সিআইএসএফ জওয়ানরা এখন কলকাতা বন্দরে সিআইএসএফের ইউনিটের সঙ্গে থাকছে।
বন্দর থেকে আরজি করে আসতে তাদের এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ফলে তাদের কাজের অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া এই ব্যবস্থা চলতে থাকলে আরজি করে কোনো কঠিন ও জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলায় আরো বাহিনী পাঠানোও কঠিন হয়ে যাবে।
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের পর পশ্চিমবঙ্গ এখন প্রতিবাদে উত্তাল। তাছা্ড়া দুষ্কৃতীরা আরজি করে ঢুকে নির্বিচারে ভাঙচুর করেছে। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। সর্বোচ্চ আদালতই আরজি করের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সিআইএসএফের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন সেখানে দুই রোম্পানি সিআইএসএফ জওয়ানকে মোতায়েন করা হয়েছে।
এই অবস্থায় সিআইএসএফের প্রতি অসহযোগিতার গুরুতর অভিযোগ সামনে এলো। আর এই অভিযোগ কোনো বিরোধী দল বা সংগঠন করেনি, করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেটাও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা। সেখানে সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে কী বলে, সেটা দেখার।
গত ২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে অসুবিধার কথা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জিনিসপত্র না থাকার কথা জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে করা আবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার তাদের কোনো জবাব দেয়নি। আদালতের নির্দেশের ফলে যে সিআইএসএফ কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের রাজ্য সরকার উপযুক্ত সাহায্য করবে কিনা তারা সেটাও বলেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাল জানিয়েছে, বর্তমান উত্তেজক পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এধরনের অসহযোগিতা প্রত্যাশিত নয়। রাজ্যের কাছে চিকিৎসকদের, বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সর্বোপরি হওয়া উচিত।
বলা হয়েছে, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে. জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি রাজ্য সরকারের তাদের কাজের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণ হওয়া উচিত। বিশেষ করে যেখানে তাদের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একটি রাজ্য সরকারের আদালতের নির্দেশ অমান্য করা শুধু যে আদালত অবমাননার ঘটনা তাই নয়, এটা সংবিধান-বিরোধী এবং নৈতিক দিক থেকেও মানা যায় না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, সর্বোচ্চ আদালত যেভাবে একটি বড় সমস্যা সমাধানের পথ নিয়েছে. সেখানে রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা তৈরি করছে, যাতে তা বানচাল হয়ে যায়। রাজ্য চায় না, এই সমস্যার সমাধান হোক।
কেন এই আবেদন?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রাজ্য সরকারের 'অন্যায্য়, অপ্রত্যাশিত, ক্ষমার অযোগ্য' ব্যবহারের মুখে পড়ে এই আবেদন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা মনে করে, রাজ্যের মানুষের ন্যায়বিচারের স্বার্থে সরকার সিআইএসএফের সঙ্গে সহযোগিতা করুক। তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে যাতে কোনো অসুবিধা না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতেই এই আবেদন করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিআইএসএফের, বিশেষ করে নারী কর্মীদের কাজ করতে যে খুব অসুবিধা হচ্ছে সেটাও জানানো হয়েছে।
কী চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চায়, সুপ্রিম কোর্ট সিআইএসএফকে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিক। সিআইএসএফ যে ন্যায্য অনুরোধ করেছে, তা যেন সব পূরণ করে রাজ্য সরকার।
আর তারা যদি এই সহযোগিতা না করে তাহলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শুনানি শুরু হোক বলে তারা জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদন, আদালত যেটা ঠিক মনে করে সেই নির্দেশ দিক।
রাজ্য দায় এড়াতে চায়?
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''কেন্দ্রীয় বাহিনীর যদি রাজ্যের কোনো সংস্থায় নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তাদের জন্য রাজ্যেকেই ব্যবস্থা করতে হয়। তাদের খরচও রাজ্যকে ওঠাতে হয়। এক্ষেত্রে হয়ত রাজ্য সরকার তাদের সেই দায়টা নিতে চাইছে না।''
২০১৩ সালে সংসদে একটি প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছিল, রাজ্যগুলির কাছে সিআইএসএফের ১১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকারও বেশি পাওনা আছে। সেসময় পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে ৩৬ লাখ টাকারও বেশি অর্থ পেত সিআইএসএফ।
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)