1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ

৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলো সুপ্রিম কোর্ট।

https://p.dw.com/p/4kQFs
আরজি করে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন।
জুনিয়র ডাক্তারদের মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। ছবি: Satyajit Shaw/DW

তবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, রাজ্য সরকারকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখবেন। আদালত নিযুক্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে কী সুপারিশ করবে, তার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই।

তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেছেন, পুলিশ ও প্রশাসন যেন সব সরকারি হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবার ব্যবস্থা করে। পুরুষ ও নারী ডাক্তারদের রেস্ট রুম ও আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা যেন থাকে। তারা কোনো হুমকির মুখে পড়লে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য

সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ''চিকিৎসকদের একাংশ এখনো আন্দোলন করছেন, কাজে যোগ দেননি। এর ফলে ২৩ জন মারা গেছেন। ছয় লাখ মানুষ চিকিৎসা পাননি।''

তার যুক্তি, ''গরিবদের জন্য সরকারি হাসপাতালই ভরসা। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধের পরেও যদি চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দেন, তাহলে কী হবে?''

কপিল সিবাল দাবি করেন, ''রাজ্যজুড়ে আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু পুলিশকে কিছু না জানিয়েই সেসব হচ্ছে।''

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, আন্দোলন করার জন্য কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কিন্তু কাজে যোগ না দিলে ব্যবস্থা না নেয়ার কথা তারা আর বলতে পারবেন না।  

তারা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, চিকিৎসকদের আস্থা ফেরাতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পরিস্থিতি দেখবেন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সব চিকিৎসককে নিরাপত্তা দিতে হবে। যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে, তার খরচ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টির উপর নজর রাখবে বলেও তারা জানিয়েছেন।

প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার

এদিন সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ''পুলিশের তরফ থেকে ২৭ মিনিটের ক্লিপিংস তাদের কাছে দেয়া হয়েছে। সেটাও একসঙ্গে নয়, মোট চারটি ক্লিপিংস আছে।''

তবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল দাবি করেছেন, ''পুরো ক্লিপিংসই দেয়া হয়েছে। কিছু টেকনিক্যাল গ্লিচের কারণে ভিডিও ভাগে ভাগে দেয়া হয়েছে।'' এক ভিডিও চার অংশে দেয়ার কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

কিন্তু জবাবে তুষার মেহতা বলেন, ''সিবিআই ২৭ মিনিটের ক্লিপিংসই পেয়েছে।''

তখন বিচারপতিরা পুরো ক্লিপিংস সিবিআইকে দেয়ার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গ : পুলিশের ‘ঘুস' প্রস্তাব

আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, ''পুলিশ ধর্ষিত ও মৃত চিকিৎসকের বাবা-মা-কে টাকা দিতে চেয়েছিল। সেই বিষয়টিও দেখার দরকার আছে।''

প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ''পরের শুনানি হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন সিবিআই তদন্ত নিয়ে আরেকটি স্টেটাস রিপোর্ট দেবে। সেখানেই এই বিষয়টি জানাবে সিবিআই।''

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, ''আইনজীবী হিসাবে আমি আমার ২৭ বছরের জীবনে কখনো দেখিনি ময়না তদন্তের আগে সার্চ ও সিজার লিস্ট তৈরি করা হয়ে গেছে।''

তার অভিযোগ, মৃতদেহ যাতে দ্রুত দাহ করা হয়, তারজন্যই এই কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "ময়নাতদন্তের পুরো রিপোর্ট দয়া করে খতিয়ে দেখুন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উপস্থিত চিকিৎসকেরা একটি লবির।''

সিবিআইয়ের বক্তব্য

সলিসিটার জেনারেল জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তারা ফরেনসিক রিপোর্ট পেয়েছেন। কিন্তু সেই স্যাম্পল তারা এইমস ও হায়দরাবাদে পাঠিয়ে আবার পরীক্ষা করতে চান।

তিনি বলেন, ''আমাদের কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, নারী চিকিৎসককে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার ক্ষতস্থান ও অন্য জায়গা থেকে স্যাম্পল নেয়া হয়েছিল।''

আদালতে এটাও জানানো হয়, পাঁচ দিন ধরে যার ইচ্ছে গেছে. ঘটনাস্থলে ঢুকেছে এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে৷

এডুলজি জানিয়েছেন, সেমিনার রুমের লাগোয়া ঘরের টয়লেট ভেঙে দেয়া হয়েছে। অপরাধ করে সেখানে বেসিনে কেউ হাত ধুলে তার কোনো প্রমাণ আর পাওয়া যাবে না।

সলিসিটার জেনারেল অভিযোগ করেন, আরজি করের কাছে সিআইএসএফের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করছে না রাজ্য সরকার। ১৫ দিন আগে বলার পর মাত্র এক কোম্পানি সিআইএসএফের থাকার জায়গা করা হয়েছে, বাকি দুই কোম্পানির করা হয়নি।

প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, সোমবার রাতের মধ্যে রাজ্য সরকারকে এই কাজ করতে হবে।

পুজোয় ফেরা ও ‘চালাকি' বন্ধের আহ্বান

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''একমাস হয়ে গেছে। সিবিআই তদন্ত করছে। বিচারও সিবিআই আদালতে হবে। এবার পুজোয় ফিরুন। উৎসবে ফিরুন।''

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ''যে আন্দোলন হচ্ছে, তার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকার ও বাম দলগুলি আছে।''

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘পুজো করতে হবে। পুজো আসছে, অ্যাডমিনস্ট্রেশনকে দেখে নিতে হবে। পুজো কমিটিগুলোর যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ডিএম, এসপি এলাকা ভিজ়িট করুন। ভিজ়িট করে দেখুন, কার কী সমস্যা রয়েছে।''

এর প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী সমীর আইচ বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ, জ্ঞান কেউ নিতে পারছে না। আপনার পরিবারের কোনো নারীর প্রতি এরকম হলে আপনি পারতেন তো উৎসবে যোগ দিতে?''

তিনি বলেছেন, ''মানুষের উপর সব ছেড়ে দিন। চালাকি বন্ধ করুন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আপনাকে আর চাইছে না।''

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই মনে করছেন , এর মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী মেলা, খেলা দিয়ে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছেন।

কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবিপি আনন্দকে বলেন, ''অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন স্তিমিত করলে জনরোষ আরো বাড়বে।''

জিএইচ/এসিবি(সুপ্রিম কোর্টের লাইভ স্ট্রিমিং)