1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনের সুফল নিয়ে রাজ্যের দাবি কি যুক্তিযুক্ত

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

সাপ্তাহিক ও পর্যায়ক্রমিক লকডাউনের সুফল মিলছে বলে দাবি করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ লকডাউন চালিয়ে যেতে তারা কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতেও যাচ্ছে৷ যদিও এই লকডাউন আদৌ কাজে আসছে না বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের৷

https://p.dw.com/p/3i2EB
Indien Kolkata | Coronavirus | West Bengal
ছবি: DW/P. Samanta

একটানা লকডাউনের শেষে ‘আনলক' পর্ব শুরু হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে মাসের কয়েকটি দিন সব বন্ধ রাখা হচ্ছে৷ এই নীতি অনুযায়ী ৭, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর লকডাউন হবে৷ আগস্ট মাসে একাধিকবার লকডাউনের দিন পরিবর্তন করা হয়েছিল৷ সেই মাসের পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, সার্বিক বন্ধের সুফল পাওয়া যাচ্ছে৷ এতে আক্রান্তের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, মাঝে মাঝে লকডাউন করায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে৷ একই সঙ্গে বেড়েছে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা৷ এর ফলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ আক্রান্তের হার কমে যাওয়ায় জুন-জুলাইয়ে হাসপাতালের শয্যা নিয়ে যে টানাটানি ছিল, সেটাও কমে এসেছে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে৷

পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, রাজ্যে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে ও আক্রান্তের হার কমের দিকে৷ জুলাইয়ের দ্বিতীয় ভাগে পরীক্ষা করার পর প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস মিলেছিল৷ আগস্টের শেষে এই হার সাত শতাংশের কিছু বেশি৷

‘যেভাবে লকডাউন করা হচ্ছে, তা অবৈজ্ঞানিক’

এই এক মাসে করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ৷ বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাই ছুটির দিনও সরকার লকডাউন করছে জমায়েত এড়াতে৷ শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চেষ্টাও কাজে আসছে৷ লকডাউন না থাকলে বাজারে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্যোগ নিয়েছেন৷ মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করা হচ্ছে৷ রাস্তার ধারে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কনটেনমেন্ট জোনে দেওয়াল ও পথলিখন করা হয়েছে মানুষকে সচেতন করার জন্য৷ লকডাউনের সঙ্গে এসবের যোগফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে অনেকের মত৷

করোনা নিয়ন্ত্রণের পিছনে লকডাউনের কোনো ভূমিকা আছে বলে মানতে রাজি নন চিকিৎসকদের একাংশ৷ মাঝে মাঝে লকডাউন করলে কোনো লাভ হয় না বলে মত সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম-এর সভাপতি, বাঁকুড়া জেলার সরকারি স্বাস্থ্য কর্তা সজল বিশ্বাসের৷ তিনি বলেন, ‘‘যেভাবে মাসের এক-একটা দিন লকডাউন করা হচ্ছে, তা অবৈজ্ঞানিক৷ লকডাউন কাজে এলে সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হত না৷ প্রশাসন ঠিক করছে কবে লকডাউন হবে, কীভাবে হবে৷ অথচ ঠিক করার কথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের৷'' তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও সব খুলে দেওয়া হচ্ছে৷ তেমন নজরদারি রাখা হচ্ছে না৷ এতে করোনার প্রকোপ বাড়লে দায় নিতে হবে সরকারকেই৷''

‘মাসের বাকি দিনগুলিতে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় থাকবে?’

লকডাউনের দিন গণপরিবহণ বন্ধ থাকছে৷ বন্ধ রাখা হচ্ছে বাজার-দোকান৷ ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেবল জরুরি পরিষেবাকে৷ অন্যান্য দিনগুলি অতীতের মতোই স্বাভাবিক বলা চলে৷ শুধু ট্রেন বন্ধ রয়েছে৷ বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সিনেমা হল৷ রাজ্য সরকার যে এই লকডাউনকে জোরালো হাতিয়ার বলে মনে করছে, তার প্রমাণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান৷ ‘আনলক-৪'-এর নির্দেশিকা জারি করার সময় ভারত সরকার বলেছিল, কোনো প্রাদেশিক সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে গোটা রাজ্যে লকডাউন জারি করতে পারবে না৷ শুধু কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন করা যাবে৷ যদিও তার আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেপ্টেম্বরে লকডাউনের তিনটি তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছিল৷ সেই সিদ্ধান্তে অনড় থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের মতামত খারিজ করে দিয়েছেন৷

কেন্দ্র ও রাজ্যের এই সংঘাতকে আদতে জনগণের নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলে মনে করছে বিরোধীরা৷ সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুই সরকারই করোনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ৷ মানুষ ওদের দিকে আঙুল তুলছে৷ পিঠ বাঁচাতে আরএসএসের পরিকল্পনায় বিজেপি ও তৃণমূল সরকার নিজেদের মধ্যে সংঘাতের নাটক করছে৷'' তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র মার্চ থেকে একটানা লকডাউন করলেও সেই দীর্ঘ সময়ের অপব্যয় করেছে৷ তখন করোনা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি৷  রাজ্য সরকারের ভূমিকাও তথৈবচ৷ তারা যে বেছে বেছে কয়েকটি দিন লকডাউন করছে, তাহলে কি মাসের বাকি দিনগুলিতে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় থাকবে?''