1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে সফল দ্বিতীয় দফার লকডাউন

২৫ জুলাই ২০২০

দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনের প্রথম দু'দিন পশ্চিমবঙ্গের চেহারা সর্বাত্মক বনধের৷ সরকারের ডাকে সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবন্দি রেখেছে৷ একইসঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন কঠোর থাকায় সফল হয়েছে লকডাউন৷

https://p.dw.com/p/3fuJa
দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনের প্রথম দু'দিন পশ্চিমবঙ্গের চেহারা সর্বাত্মক বনধের৷ সরকারের ডাকে সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবন্দি রেখেছে৷ একইসঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন কঠোর থাকায় সফল হয়েছে লকডাউন৷
ছবি: DW/P. Samanta

মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাস পর্যন্ত লকডাউনের সুফল মিলেছিল৷ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ কিন্তু জুলাই থেকে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হতেই ধীরে ধীরে বেড়েছে সংক্রমণের হার৷ পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে একই ছবি৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সপ্তাহে দু'দিন লকডাউন করা হবে৷ সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল দ্বিতীয় দফার প্রথম পূর্ণাঙ্গ লকডাউন৷ এতে সাড়া মিলেছে প্রথম দফার লকডাউনের মতোই৷ কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় বৃহস্পতিবার বাজার ও দোকানপাট খোলেনি৷ সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ ছিল৷ বন্ধ ছিল ব্যাংক, ডাকঘর, রেশন দোকান৷ গণপরিবহণ রাস্তায় নামেনি৷ বন্ধ রাখা হয়েছিল ফেরি চলাচল৷ শহরতলির ট্রেন অবশ্য বন্ধ রয়েছে আগে থেকেই৷

লকডাউন শুরুর আগে ২২ মার্চ একদিনের জন্য দেশজুড়ে জনতা কার্ফু বলবৎ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেদিন সাধারণ মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গিয়েছিল, তা লকডাউনের শেষ পর্যায়ে অনেকটাই কমে আসে৷ কিছুটা উদাসীনতা, কিছুটা রুজি রোজগারের তাগিদে৷ গত কয়েক সপ্তাহে রাস্তাঘাটে মাস্ক না পরে অনেকে ঘুরছিলেন৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যেখানে-সেখানে চলছিল আড্ডা৷ পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি৷ এর ফলে যেমন সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে, তেমনই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর চাপও বেড়েছে৷ লকডাউনের আগের ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৪৩৬ জন৷ বুধবার মৃত্যু হয় ৩৪ জনের৷ সেদিন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৫৷ এই পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ছাড়া পথ ছিল না রাজ্য সরকারের৷

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার মানুষ নিজেদের স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি রেখেছে৷ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে প্রায় কাউকেই দেখা যায়নি৷ রাজ্যের এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, এই লকডাউন আগের মতো একেবারে ধর্মঘটের রূপ নিয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে নিউ আলিপুরের বাসিন্দা শুভঙ্কর দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে একটা লাগামছাড়া ব্যাপার দেখা যাচ্ছিল৷ এদিন আমি ওষুধ আনতে গিয়ে দেখলাম, একেবারে কার্ফুর চেহারা৷ এটাই দরকার৷ শিথিল করলেই লোকজন বেরিয়ে পড়বে৷’’ তাই অনেকেই লকডাউন চাইছেন সীমিতভাবে৷ লেকটাউনের বাসিন্দা অপর্ণা কুণ্ডু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অফিসের গাড়িতে যাতায়াতের পথে লোকজন দেখিনি৷ অথচ বুধবারই রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল না, এত মানুষ রোজ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে৷ টানা না করে সপ্তাহে দু’-তিনদিন লকডাউন হোক৷’’

এই সাফল্যের প্রধান কারণ পুলিশ-প্রশাসনের কঠোর মনোভাব৷ কলকাতা-সহ সব জেলায় পুলিশ অত্যন্ত সক্রিয় ছিল৷ লকডাউন সফল করতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারা ও গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷ দিনভর চলেছে ধরপাকড়৷ শুধু কলকাতাতেই ৮৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে লকডাউন অমান্য করায়৷ মাস্ক না পরার জন্য ৫৫২ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ তৎক্ষণাৎ জরিমানা দিতে না পারলে আদালতে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ৷ জেলায় গ্রেপ্তারির সংখ্যা প্রায় ২ হাজার৷ বিধি অমান্য করায় অনেক জায়গায় পুলিশ কান ধরে ওঠবোস করিয়েছে৷ চারচাকা গাড়ি ও বাইক থামিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে কী প্রয়োজনে আরোহীরা বাইরে বেরিয়েছেন৷ উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে গাড়ি আটক করেছে পুলিশ৷ মূল সড়কের পাশাপাশি যাতে গলি-মহল্লায় বিধি মানা হয়, সে জন্য ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে৷

সন্ধি মুখোপাধ্যায়

একই ছবি দেখা গিয়েছে শনিবারের লকডাউনে৷ আগামী বুধবার এভাবেই লকডাউন করা হবে৷ তবে অনেক জায়গায় সংক্রমণের হার বেশি হওয়ায় টানা এক সপ্তাহ লকডাউন চলবে৷ বৃহস্পতি ও শনিবারের ছবিতে স্পষ্ট, পুলিশ কঠোর হলে কারো পক্ষে বিধি ভাঙা সম্ভব নয়৷ সাপ্তাহিক লকডাউনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে৷ সাধারণ মানুষও চাইছিল লকডাউন সফল করতে৷ ক্লাবগুলিকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে৷ তাদের কাজ হবে প্রশাসনের বার্তা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া৷ তাহলে পুলিশকে লাঠিচার্জ বা কান ধরে ওঠবোস করাতে হবে না, আশা করি৷’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান