মোদী সরকারের রেল বাজেট
৯ জুলাই ২০১৪রাজনীতির চাপে রেলমন্ত্রী সদানন্দ দেবগৌড়া পূর্বসূরিদের মতো স্রেফ জনমোহিনী পথে হাঁটেননি৷ দেশের সার্বিক আর্থিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে রেল পরিকাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি চেষ্টা করা হয়েছে রেলের আয়-ব্যয়ের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রাখার৷ জোর দেয়া হয়েছে রেলের আধুনিকীকরণ এবং যাত্রী নিরাপত্তার ওপর৷ জোর দেয়া হয়েছে কৌশলগত আর্থিক পরিসর বাড়ানোর ওপর, যা রেলের মেরুদণ্ড৷
আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য জরুরি লগ্নি টানা৷ সেক্ষেত্রে পিপিপি বা সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপ মডেলকে মূলধন বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ বাহন করতে চাওয়া হয়েছে৷ যন্ত্রাংশ তৈরি থেকে নতুন রেল লাইন বসানো – সব কিছুতেই বেশি করে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগকে৷
ভবিষ্যৎ রেল প্রকল্প রূপায়নে বেশির ভাগ অর্থ আসবে যৌথ উদ্যোগের পথে৷ পণ্য পরিবহনে আয় কমায়, জোর দেয়া হয়েছে পণ্য পরিবহনে৷ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে জোড়ার জন্য রেল বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে হীরক-চতুর্ভুজ প্রকল্পের কথা৷ দেশের বড় বড় বন্দরগুলিকে রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত করার এবং কয়লা পরিবহনের জন্য নতুন তিনটি রেল লাইন বসানো হবে৷ এবারের রেল বাজেটে অরুণাচল প্রদেশসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্য রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করতে মিটারগেজ লাইনকে উন্নত করা হবে ব্রডগেঝে৷ প্রসঙ্গত, এর আগে ঐ রাজ্যগুলির দিকে নজর দেয়া হয়নি৷ তাই এবার এ জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে৷
রেল বাজেটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রেলওয়ের আধুনিকীকরণে উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এবং প্রযুক্তির কথা বলা হয়েছে৷ যা রমধ্যে আছে মুম্বই-আমেদাবাদের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার গতির বুলেট ট্রেন চালানো৷
এ বিষয়ে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী অধীর চৌধুরির মন্তব্য: ‘‘বর্তমানে রেল লাইনের যে অবস্থা, তাতে ঐ লাইনে বুলেট ট্রেন চালানো সম্ভব নয়৷'' উল্লেখ্য, হালে দিল্লি-আগ্রা রুটে পরীক্ষামূলকভাবে দ্রুতগামী ট্রেন চালানো হয়৷ অর্থাৎ ভারতীয় রেলের আধুনিকীকরণ তথা রূপান্তরে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে তথ্য-প্রযুক্তি৷ রিজার্ভেশন থেকে ওয়াই-ফাই, ই-টেন্ডার – সব কিছুই হবে পেপারলেস৷ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে অপারেটিং খরচ কম করা হবে৷ সেজন্য রেল স্টেশন এবং রেল অফিসগুলিতে সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রকল্প হাতে নেয়া হবে৷ এছাড়া রেল বিভাগে দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করতে রেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে টেকনিকাল ও নন-টেকনিকাল বিষয় পড়ানো হবে৷
রেলমন্ত্রী সদানন্দ দেবগৌড়ার ভাষায় যাত্রী বা মাল ভাড়া বাড়িয়ে অর্থ জোগানো কোনো সমাধান নয়৷ এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনসালের মন্তব্য: ‘‘বাজেটের আগেই তো যাত্রী ও মাল ভাড়া বাড়িয়ে বসে আছেন মোদী সরকার৷ আর কী বাড়াবেন?''
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মতে, রেল বাজেটে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রকল্পের আশ্বাস না দিয়ে অসমাপ্ত প্রকল্পগুলির সফল রূপায়ন জরুরি৷ তবে রেল বাজেট দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা নেবে, এমনটাই মনে করছেন শিল্প ও বাণিজ্য মহল৷