ডিজিটাল নিরাপত্তা ‘আইন’ নাকি ‘কালাকানুন’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন প্রণীত হয়, তখন থেকেই এই আইন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এ আইন নিয়ে সমালোচনার মাত্রা আরো বেড়েছে৷ ঢাকায় সাংবাদিক সঞ্জয় দে ফেসবুক বার্তা দিয়েছেন এভাবে-
‘‘আইনে জামিন-অযোগ্য ধারা যুক্ত করা পুরোপুরি অসাংবিধানিক৷ তারপরেও সরকার বিভিন্ন আইনে এটা রাখে প্রথমত, জনগণকে তুষ্ট রাখতে (যেমন, নারী নির্যাতন দমন আইন) এবং দ্বিতীয়ত, নিজেদের স্বার্থে (যেমন আইসিটি আইন)৷ এই জামিন-অযোগ্য ধারার বিপুল অপপ্রয়োগ হয় বিচারিক আদালতে মামলা চলার সময় এবং এর শিকার মূলত ক্ষমতাহীন-দুর্বল পক্ষ৷’’
একই যুক্তি দেখিয়ে ‘কালাকানুন’ বলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তুলেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ও অনেক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট৷ তারা ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকেই মুশতাকের মৃত্যুতে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলন করছে৷ প্রতিবাদী মশাল মিছিল শেষ করে এসে অনলাইন অ্যাক্টিটিভিস্ট ও লেখক কাওছার শাকিল জানালেন, কিছুদিন আগ পর্যন্তও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনই যথেষ্ট মনে করতেন তিনি৷ কিন্তু মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর মনে করছেন এ আইন রাখার উপযোগী না, কারণ, আইনটি থাকলে এর অপব্যবহার হবেই৷
অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আসার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্যাটায়ারের পরিসর অনেক সীমিত, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে৷ তাই রাজনৈতিক স্যাটায়ার করার প্রবণতাও আগের তুলনায় কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন৷ কোনো কোনো জাতীয় দৈনিকের সাপ্তাহিক রঙ্গ-ব্যাঙ্গাত্মক ক্রোড়পত্র বন্ধ পর্যন্ত হয়ে গেছে৷ এ প্রসঙ্গে কথা হয় লেখক ইমন চৌধুরীর সঙ্গে৷ একাধিক জাতীয় দৈনিকে রঙ্গ-ব্যাঙ্গাত্মক লেখা, কার্টুন সম্পাদনার অভিজ্ঞতা থাকা এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অনেক মহলে অনেক আলোচনা আছে৷ এটা কঠোর হলে বা নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সরকারের অবশ্যই দেখা উচিত৷ আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই সময়ে বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতে সরকারের সহনশীল আচরণ কাম্য৷ আবার জনগণের দিক থেকেও বাক স্বাধীনতার নামে যা খুশি তাই বলা ঠিক হবে না৷ দুপক্ষ থেকেই একটা সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে৷’’
কার্টুনিস্ট কিশোরের মুক্তি দাবি
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদ গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাদের মুক্তির দাবিতে অনলাইনে সোচ্চার ছিলেন অনেকে৷ গতকাল থেকে কার্টুনিস্ট কিশোরের মুক্তির দাবি আরো প্রবল হয়েছে৷ তার শারিরীক অবস্থাও ভালো নয়- এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে৷
অন্যদিকে মুশতাকের মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি আছে কিনা, তা তদন্ত করার দাবিও তুলেছে আন্দোলনকারীরা৷ এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে৷ তবু মাঠ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে আন্দোলনকারীরা৷ ১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷ তার আগে গণজমায়েত কর্মসূচিও চলতে থাকবে৷ এসব কর্মসূচি প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাক্টিটিভিস্ট ও লেখক কাওছার শাকিল ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে বলেন, কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকার একটা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করুক, যার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতিকার হবে৷