লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১শুক্রবার তিনি চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন করেন বলে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টানার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়৷ সেই কার্যালয় উদ্বোধনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে৷
কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু কীভাবে হলো, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম কথা হলো, যে লেখকের কথা বললেন, মুশতাক আহমেদ, তিনি আগেও দুই-একবার তার লেখনিতে আইন-শৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন৷ সেজন্য অনেকেই মামলা করেছিলেন৷ সম্প্রতি ২০২০ সালে যে মামলাটি হয়েছিল সেই মামলার জন্য তিনি কাশিমপুর জেলখানায় অন্তরীণ ছিলেন৷’’
‘‘হঠাৎ করেই আমাদের আইজি প্রিজন থেকে আমি যে সংবাদটা পেয়েছি, তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে কারাগারে যে হাসপাতাল আছে সেখানে চিকিৎসাসেবা পান৷ অবস্থা আরেকটু খারাপ দিকে গেলে গাজীপুর তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে মৃত্যুবরণ করেন৷’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘সব মৃত্যুর বিষয়েই এনকোয়ারি হয়৷ একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলুন বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলুন, নানা প্রশ্ন আসে৷ যে কোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা অ্যাক্সিডেন্ট হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়৷ পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারবো কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে৷ প্রয়োজন বোধে এনকোয়ারি কমিটি করবো৷ কালকে তো হলো, নিশ্চয়ই এটার ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো৷’’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় বিচারের মুখে থাকা মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান৷ কী কারণে ৫৩ বছর বয়সি মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি৷ বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা মুশতাকের হাত দিয়েই কুমির রপ্তানি শুরু হয় এবং এ বিষয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন৷ মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন৷ সেটাকে কেন্দ্র করেই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন৷
গত বছরের ৬ মে করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে৷ তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়৷ এবং ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়৷
মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান৷ মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও আদালতে তা মঞ্জুর হয়নি৷
মামলাটিতে আসামির তালিকায় আরো ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক, সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার৷ তদন্তের পর পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এই মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়৷ বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা৷
র্যাবের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস মহামারি সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করেছিল র্যাব৷
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার জন্য অনেকে অনেক রকম কাজ করে যাচ্ছে৷ আল-জাজিরা যে নিউজ দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি৷ এ দেশের মানুষ আল-জাজিরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷’’
‘‘সবগুলোই আমরা খতিয়ে দেখবো৷ কেন এই মিথ্যা সংবাদ, কেন এই মিথ্যা নিউজ প্রচার করেছে তা তদন্ত করে দেখছি৷ এর সাথে দেশের কেউ জড়িত কিনা তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে৷’’
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)