সিরিয়াল থেকে পরকীয়া?
৭ আগস্ট ২০১৪বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচারে হস্তক্ষেপ কামনা করে এই আবেদন করেন৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, রিট আবেদনে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরির্দশকেকে বিবাদী করা হয়েছে৷ এই রুল জারির পর চূড়ান্ত শুনানিতে আদালত তা মঞ্জুর করলে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হবে৷
ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো হলেও ভারতে বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল দেখানো হয় না – মূলত এ কারণেই এ রিট আবেদনটি করা হয়েছে বলে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়৷ এছাড়া চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করার কারণ হিসেবে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়া এবং সম্প্রতি ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত একটি সিরিয়ালের এক চরিত্রের পোশাকের জন্য দু'জনের আত্মহত্যা করার বিষয়গুলোরও উল্লেখ করা হয়েছে৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে৷ কয়েক মাস আগেই নকশা ব্লগে রাজু দাবি করেছিলেন, ভারতীয় চ্যানেল গৃহিনীদের পরকীয়া প্রেম করতে শেখায়৷ তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘বাহ কি সুন্দর পরকীয়া শিক্ষা দিচ্ছে ভারতীয় চ্যানেল'৷
এ লেখায় ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত একটি ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য দেখে ব্লগার অবাক এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ সেই দৃশ্যে এক গৃহিণীকে এক তরুণ নানা কৌশলে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করতে দেখেছেন বলে রাজুর দাবি৷ নকশা ব্লগের এই ব্লগার তাঁর সংক্ষিপ্ত লেখাটির শেষে লিখেছেন, ‘‘আমাকে একটি ভারতীয় চ্যানেলমুক্ত টিভি চ্যানেল দাও, আমি তোমাদের পরকীয়া মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেবো৷''
সামহয়্যারইন ব্লগে কতিপয় পুরুষের এমন মানসিকতার নিন্দা জানিয়েছেন সাখাওয়াত সনেট৷ দুই পর্বের একটি লেখার শেষ পর্বে তিনি দাবি করেন, তিনি কখনো ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল দেখেন না৷ যাঁরা ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের বিপক্ষে সোচ্চার তাঁদের উদ্দেশ্যে সনেট লিখেছেন, ‘‘আসলে আপনাদের রাগ সিরিয়ালের উপর না, আপনাদের মায়েদের উপর, কারণ, তাঁরা আপনাদের অন্য কিছু দেখতে দেয় না৷''
ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে সব মেয়ে পরকীয়া প্রেম করতে শিখছে সনেট তা বিশ্বাস করেন না৷ এমন বক্তব্যের অসারতা বোঝাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘২০০০ সালের আগে দেশে সিরিয়াল ছিল না৷ তাই বলে কি পরকীয়া আর কুটনামি ছিল না? জহির রায়হান যেন কত সালে কুটনামি আর পরকীয়া নিয়ে ‘হাজার বছর ধরে' লিখেছিল? তখনও কি এসব সিরিয়াল দেখে শেখা হয়েছিল?''
সামহয়্যারইন ব্লগের এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘৯৫ শতাংশ মায়েরাই সিরিয়াল দেখে৷ দয়া করে বলবেন, আপনাদের কার কার মা অন্য কারো সাথে পরকীয়া করে ভেগেছেন? কয় জনের মা সারাদিন কুটনামি নিয়ে থাকে? সিরিয়াল যদি এতই ‘ইনফ্লুয়েন্স' করে তবে তো দেশের একটা মেয়েও স্বামীর ভাত খেতো না! বরং আপনার থেকে আপনার মা হাজার গুণ ভালো, হাজার গুণ সভ্য৷ আপনি তো সিরিয়াল দেখেন না৷ কিন্তু আপনি কি আপনার মায়ের থেকে ‘বেটার' মানুষ হতে পেরেছেন? তারা মা৷ আর মায়েরা মা-ই হয়...৷''
সনেটের মতে, ‘‘কিছু কিছু মানুষ জন্মগতভাবেই এ সব নিয়ে আসে৷ এদের এ সব শিখতে সিরিয়াল দেখার প্রয়জন হয় না৷ এদের ভেতরে এতই ‘নেগেটিভিটি' যে ভালো ‘এনভায়রনমেন্টে' রাখলেও নেগেটিভিটি ছড়াবে৷ সিরিয়ালে সব সময় দুষ্টের দমন, সত্যের জয় দেখানো হয়৷ একজন নারী নিজের সব দিয়ে তাঁর পরিবারের রক্ষা করে, সন্তানদের মানুষ করে...৷''
তারপর সনেট ‘পরকীয়া শেখায়' এই অজুহাতে টিভি সিরিয়ালের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া কিছু মানুষের বক্তব্য শুনে আক্ষেপ করেছেন এভাবে, ‘‘আপনার মা সারাটা দিন খেটে খেটে আপনাকে মানুষ করে৷ আপনাদের জন্য সারাটা দিন পরিশ্রম করে৷ সারাদিন পরিশ্রমের পর কী এমন করে? কয়েকটা সিরিয়ালই তো দেখে! তাঁদের কাছে এটাই বিনোদন৷ আর আপনি তাঁর ঐ সামান্য আনন্দটুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন৷ বাহ! দারুণ!! মেয়েদের সিরিয়াল দেখা নিয়ে কত কত কথা৷....কই তাঁরা তো আপনার খেলা দেখা নিয়ে এত চুলকায় না? লজ্জা করে না ‘পাবলিকলি' নিজেদের মা-বোনকে এ সব গালি দেন!! সিরিয়াল না দেখে এই শিক্ষা পেয়েছেন আপনি?''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ