মানব মস্তিষ্ক আসলে আশাবাদী
১৬ অক্টোবর ২০১১শুধুই সাদা দেখতে হবে৷ কালো দেখা চলবে না৷ ভবিষ্যতের দিকে তাকালে আমাদের মস্তিষ্ক নাকি শুধু ইতিবাচক চিন্তাকেই পাত্তা দেয়৷ যা কিছু নেতি, যার মধ্য থেকে যেতে পারে ব্যর্থতা বা হতাশার সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কা, ব্রেন সেদিকটাকে আমল দেয়না বিশেষ৷
এ এক সাম্প্রতিকতম গবেষণার ফলাফল৷ নেচার নিউরোসায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের এক গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, শতকরা হিসেবে আমাদের চারপাশে ৮০ শতাংশ মানুষ আশাবাদী৷ তবে সবসময়ে যে সেই আশাবাদী মানসিকতা খুব একটা যুক্তি মেনে চলে, তা কিন্তু নয়৷ আসল কথা হলো, আমাদের মস্তিষ্ক নিজেই এই আশাবাদের জন্ম দেয়৷ সে শুধু সুখের বা আনন্দের বা ইতিবাচক খবরগুলিকেই মনের মধ্যে সঞ্চিত করে রেখে দেয়৷ আর যেসব খবরের মধ্যে দুঃখ, বিষাদ বা আতঙ্ক এসব রয়ে গেছে, সেগুলোকে ছেঁটে বাদ দিয়ে দেয় মানুষের মন থেকে৷ সোজা কথায় স্মৃতি থেকে৷
প্রশ্নটা ভালো৷ কিন্তু এই তত্ত্বটা বোঝা গেল কীভাবে? এর উত্তরে জানানো যাক, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের এক গবেষকদল বেশ কিছু মানুষকে বেছে নিয়েছিল যাদের চিন্তাভাবনার জগতের ওপর দুঃসংবাদের প্রভাব দেখতে৷ সেটা দেখতে গিয়ে দেখা যায়, আমার ক্যান্সার হতে পারে, পার্কিনসনস রোগ হামলা চালাতে পারে, গাড়িটা চুরি যেতে পারে বা স্ত্রী কিংবা স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা - এসব দুঃসংবাদগুলোকেই মস্তিষ্ক ঠেলে পিছনে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ এবং কোনো ক্ষেত্রেই বড়জোর ৩১ শতাংশের বেশি মূল্য দিচ্ছেনা সেসবের ওপর৷
আসলে, গবেষকরা বলছেন, আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশটা ইতিবাচক চিন্তা করার জায়গা৷ আর আশাবাদী মানুষদের ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায়, সেই সামনের অংশটাই বেশি ক্রিয়াশীল৷ তাই বলে যে নিরাশাবাদীরাও নেই তাতো আর নয়! তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সামনের অংশটা সেভাবে কার্যকরী হয়ে ওঠেনা৷ তেমন মস্তিষ্কের মানুষরা আবার কালোকেই দেখে বেশি, সাদাকে দেখে কম৷
সুখের বিষয়, এই কালো দেখার মানুষ সংখ্যায় অনেক কম৷ যেমন গবেষণা বলছে, চারপাশের ৮০ শতাংশ মানুষ সাদাতে আগ্রহী৷ ইতিবাচকতায় বিশ্বাসী৷ তার জন্য আবার দায়ী এই মস্তিষ্কই৷ তবে, বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশের একজন সাধারণ মানুষের জীবনযাপনটাই হয়ে যেত দুরূহ যদি সে শুধুই কালোকে বা নেতিকে ভালোবাসত৷ আশাবাদ না থাকলে ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর তাগিদটাও তো হারিয়ে যেত৷ তাই নয়? সেই সুবাদে মস্তিষ্ক কিন্তু ভালো কাজই করে থাকে৷ দুঃখকে ভুলিয়ে রেখে সে চেষ্টা করে সুখের দিকে তাকানোর রাস্তা খুলে রাখার৷ তাতে আর কিছু না হোক, আনন্দটা তো মনের ভিতরে ক্রিয়াশীল থাকে! আর তার মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্নটাও যে তৈরি হতে পারে৷
প্রতিবেদন: এএফপি/ সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ