‘এটা একটা সেকেন্ড শাহবাগ’
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩কথাটা বলছিলেন লন্ডনবাসী বাংলাদেশি, ‘আমার ব্লগ'এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুশান্ত দাশগুপ্ত৷ গোড়ায় তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘লন্ডনে, মনে করেন, এটা একটা সেকেন্ড শাহবাগ৷'' লন্ডনে বহু বাংলাদেশির বাস৷ তাদের অধিকাংশই শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, বললেন সুশান্ত, ‘‘এক জামাতি বাদ দিলে৷'' এবং শাহবাগের সঙ্গে মিল রেখেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ লন্ডনে বাংলাদেশিদের যে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আছে, তারা নিজের নিজের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে৷
বিগত ৮ই জানুয়ারি আলতাব আলী পার্কের ভাষা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের সমাবেশে জামায়াত সমর্থকদের নিয়ে গোলযোগের কথা বললেন সুশান্ত৷ দৃশ্যত জামাত আগেভাগেই সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে বসে ছিল, যে কারণে বাকিরা সেখানে পৌঁছলে পুলিশ তাদের জানায়, তারা এখানে সমাবেশ করতে পারবে না৷ বিরোধ ও উত্তেজনার শুরু সেখান থেকেই৷ এবং সে'যাবৎ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ও প্রত্যেকটি স্থানে একই কৌশল অবলম্বন করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীরা, জানালেন সুশান্ত দাশগুপ্ত৷
মঙ্গলবার ঐ আলতাব আলী পার্কের সামনেই তিন মিনিটের নীরবতা পালনের প্রচেষ্টায় তাদের ব্যাঘাত দেয় জামাত সমর্থক এবং যুক্তরাজ্যে ‘বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ' কিছু ছেলেরা, যারা সব সময়ে কাছাকাছিই থাকে৷ এই হল সুশান্তর বিবরণ৷ তারা নাকি ‘‘বিভিন্নভাবে মেসেজ দিচ্ছে, ইমেল দিচ্ছে, তোমাকে আমি দেখে নেব৷'' এই ভাবেই উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ বিরোধ শেষ অবধি সংঘর্ষের রূপ ধারণ করার ‘‘খুবই সম্ভাবনা আছে'', বললেন সুশান্ত দাশগুপ্ত৷ বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি ঐ আলতাব আলী পার্কেই জমায়েত হবেন তারা – এবং জামাত ও তাদের সহচররা বাধা দিতে এলে, তারা সে বাধা মানবেন না, বলে ঘোষণা করলেন সুশান্ত৷ কাজেই সেদিন সংঘর্ষের বিশেষ আশঙ্কা থাকবে৷
বলতে কি, সুশান্তর মতো ‘অ্যাক্টিভিস্টরা' যে যার নিজের মতো করে পুলিশকে জানিয়েছেন তাদের প্রতি হুমকির কথা৷ পুলিশ দৃশ্যত বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং পুলিশ মোতায়েন আছে৷
যুদ্ধাপরাধের বিচার বিরোধী এই মানুষগুলি কারা, এ'প্রশ্নের জবাবে সুশান্ত বলেন, অবশ্যই জামায়াতি ইসলামির সমর্থক, যারা বাংলাদেশি৷ সেই সঙ্গে এই দেশে জন্ম কিছু তরুণ-কিশোর, যারা ‘‘একদম ব্রেনওয়াশড৷'' তাদের বোঝানো হয়েছে, ‘‘সাঈদি'র বিরুদ্ধে যারা, তারা সবাই কাফের, তারা হিন্দু এবং তারা ইসলাম ধর্মের বিরোধী''৷
যুক্তরাজ্যে জন্ম এবং যুক্তরাজ্যে পালিত এই বিপক্ষ গোষ্ঠীতে শুধু বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরাই নয়, সেই সঙ্গে ‘‘ইরান আছে, ইরাক আছে, সৌদি আরব আছে, দুবাই আছে; বিশেষ করে তুরস্কের ছেলেমেয়ে আছে কিছু; তারপরে সোমালি৷'' এদের সকলেরই জন্ম যুক্তরাজ্যে, সেখানেই বড় হয়েছে৷ তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানে না৷ ‘‘শুক্রবারে তারা কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসা করছিল, ‘আর ইউ হিন্দু? আর ইউ কাফির? হোয়াই আর ইউ হিয়ার?''
সাক্ষাৎকার: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন