‘ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার টিসিবিকে দুর্বল করেছে’
২৫ মার্চ ২০২২কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে বলেই টিসিবি দুর্বলতা কাটাতে পারছে না৷
ডয়চে ভেলে: টিসিবি কখন শুরু হয়েছিল? উদ্দেশ্য কী ছিল? কেন বন্ধ হয়ে গেল?
এস এম নাজের হোসেন: স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু টিসিবি শুরু করেছিলেন৷ এটা ছিল রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা৷ এর উদ্দেশ্য ছিল বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, ন্যায্য মূল্যে পণ্য দিয়ে বাজারকে ঠিক রাখা৷ ব্যবসায়ীরা যাতে এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে৷ কিন্তু ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই টিসিবির বিরোধিতা করে আসছিল৷ তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে সেই কারণে টিসিবি বন্ধ করতে সব চেষ্টা চালায়৷ পরে টিসিবির কার্যক্রম বলতে গেলে বন্ধই হয়ে যায়৷ এখন আবার চালু হয়েছে৷
টিসিবি তো পণ্য আমদানি করে সরাসরি বাজারেও দিতো৷ সেটা কি এখন হচ্ছে?
না, সেটা এখনকার টিসিবির বড় ধরনের দুর্বলতা৷ যে উদ্দেশ্যে টিসিবি শুরু হয়েছিল, এখন আর সেই উদ্দেশ্যে নেই৷ এখন স্থানীয় বাজার থেকে তারা কয়েকটি পণ্য কিনে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছে৷ এতে বাজারের পণ্যের ওপরই নতুন করে চাপ পড়ছে৷ ভর্তুকি দিচ্ছে৷ যদি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে আনতো টিসিবি, তাহলে বাজারে এর একটা প্রভাব পড়তো৷
টিসিবি তো এখন আর পণ্য আমদানি করে না৷ করলে কী হতো?
যেসব পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন, তা যদি টিসিবিও আমদানি করতো তাহলে এখানকার বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকতো৷ কিন্তু টিসিবি যা করছে, তাতে কিন্তু বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো প্রভাব পড়ছে না৷
টিসিবি এক কোটি পরিবারকে কম দামে চার-পাঁচ ধরনের পণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে৷ বাজারে তার কি কোনো প্রভাব আছে?
কিছু প্রভাব পড়ছে৷ এক কোটি পরিবারের কাছে পণ্য যাচ্ছে৷ তবে এটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে দিলে বাজারে অনেক বেশি প্রভাব পড়তো৷
হঠাৎ করে কার্ড দেয়া হলো৷ এটাকে রেশন কার্ডের মতো স্থায়ী করা যায়?
আমরা বলেছিলাম এরকম ট্রাকে সেল না করে বিভিন্ন এলাকায় ন্যায্য মূল্যের দোকান করার কথা৷ এর বিপরীতে কার্ড দেয়া হবে৷ নিয়ম অনুযায়ী পণ্য কিনবে৷ এটা যখন যেমন প্রয়োজন সেভাবেও করা যায়৷ রেশন কার্ডও করা যায়৷ আমাদের এখানেও আগে ছিল৷ কেউ মনে করতে পারেন আমরা ধনী হয়ে গেছি, আমাদের এগুলোর দরকার নাই৷ কিন্তু এখনো পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর জন্য এই ব্যবস্থা আছে৷ তাই নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এটা করা যায়৷ আমাদের পাশের দেশেও আছে৷
সরকার টিসিবির পণ্য ছাড়াও ভ্যাট কমিয়েছে, আরো উদ্যোগ নিয়েছে, তারপরও কি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পণ্যের দাম কমেছে?
না, কমেনি৷ ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়েছে৷ আর যে পণ্যের তারা দাম বাড়িয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার আগে আমদানি করেছে৷ তা-ও আবার আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়ার হারের চেয়ে বেশি হারে বাড়িয়েছে৷ মার্কেটে পণ্য মজুদ আছে, তারপরও তারা বাড়িয়েছে৷
সরকার তো সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের সিন্ডিকেটের কথা বলছে৷ তাদের কি সরকার চেনে না?
সরকার চিনবে না কেন? সরকার তো ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে৷ সরকারের ধারণা, ব্যবসায়ীরাই আসল শক্তি৷ ফলে যারা সিন্ডিকেট করে, তাদের কিছু হয় না৷ দুই বছর আগে পেঁয়াজ নিয়ে যারা কারসাজি করেছিল, তাদের তালিকা তৈরি করেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ সরকার তো সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না৷ তারা ব্যবসায়ীদের কথা ভাবে৷