1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ জানুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) বলছে, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে চাল, আলু আর পেঁয়াজের দাম বেড়েছে৷ এই সিন্ডিকেট কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সরকার?

https://p.dw.com/p/3oUIz
কারওয়ান বাজার (ফাইল ছবি) ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সাবেক গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘যারা নীতিনির্ধারক তাদের সঙ্গে এদের কোথাও না কোথাও সম্পর্ক আছে৷ সেটা লেনদেনের সম্পর্ক৷ তা না হলে এটা হতে পারে না৷ কেউ তো নির্মোহভাবে তাদের কন্ট্রোল করছে না৷ আপনি যদি তার কাছ থেকে সুবিধা পান, তাহলে কিভাবে নির্মোহভাবে কাজ করবেন? আমি জানি, মাঠ পর্যায়ে অনেকেই আছে, তারা সঠিকভাবে কাজটা করতে চায়৷ কিন্তু উপর থেকে যখন নির্দেশ আসে তখন তাদের কিছু করার থাকে না৷ শুধু এই সরকার না, আগের সব সরকারের আমলেই এটা হয়েছে৷ শুধু ব্যতিক্রম ছিল ২০০৭ ও ২০০৮ সালে৷ তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা তো রাজনীতিবিদ ছিলেন না৷ তারা পেশাদার লোক ছিলেন৷ তারা এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের চিনতেন না৷ তারপরও রাজনীতিটা রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত৷''

গত মঙ্গলবার বিএআরসি একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে৷ সেখানে চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম কেন বেড়েছে তার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে৷ গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য এবং প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম৷ চাল নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার৷ আলু নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ আব্দুর সবুর এবং পেঁয়াজ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি অর্থনীতিবিদ আব্দুর রশীদ৷

'মাঠ পর্যায়ে অনেকেই সঠিকভাবে কাজটা করতে চায়'

কী প্রক্রিয়ায় গবেষণা হয়েছে? কেনই বা সরকার সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? এসব প্রশ্নের জবাবে গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘আমরা গবেষণা করে দেখিয়েছি, কিভাবে সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে৷ চালের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সরকারের হাতে পর্যাপ্ত চালের মজুদ ছিল না, যা ছিল মিলারদের হাতে৷ ফলে তারা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চাল ছাড়েনি৷ সরকারের হাতে যদি পর্যাপ্ত চাল থাকতো, তাহলে ওএমএসের মাধ্যমে বাজারে চাল ছেড়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো৷ আলুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ এটা তো সরকারের হাতে থাকে না৷ থাকে কোল্ড স্টোরেজ ও ব্যবসায়িদের কাছে৷ বন্যার কারণে যখন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়, তখন আলুর উপর চাপ পড়ে৷ আলুর চাহিদা যখন বেড়ে যায়, তখন কোল্ড স্টোরেজ থেকে পর্যাপ্ত আলু বাজারে ছাড়া হয়নি৷ অথচ সাড়ে তিন লাখ মেট্রিকটন উদ্বৃত্ত আলু আমাদের রয়েছে৷ এখানেও সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আলু বাজারে আনতে পারেনি৷ আর পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে৷ কিন্তু ভারত রফতানি বন্ধ করায় বাজারে সংকট তৈরি হয়৷ তখন অন্য জায়গা থেকে দ্রুত আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷''

বিএআরসি উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্ত বিক্রি করে দেন, গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরণটি পরিবর্তিত হয়েছে৷ এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন৷ ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করেছিলেন এবং মজুদ ধরে রেখেছিলেন৷ আলুর মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুত এবং হিমাগার থেকে আলু কম সরবরাহের কথা৷ পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পেছনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কারসাজি এবং ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা৷ পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভারতের ওপর পেঁয়াজ আমদানির জন্য নির্ভরতা অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে৷

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, ‘‘শুধুমাত্র চাল, আলু আর পেঁয়াজ নয়, আরো আনেক কিছুতেই সিন্ডিকেট রয়েছে৷ ভোজ্যতেলেও তো সিন্ডিকেট কাজ করে৷ এই সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী এবং এদের হাত অনেক লম্বা৷ শুধু এই সরকার নয়, আগের সরকারগুলোর সময়ও আমরা দেখেছি, সিন্ডিকেটের কারণে মাঝে মধ্যেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়৷ সরকার চাইলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷''

'সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে'

গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক৷ তিনি স্বীকার করেছেন, এ বছর চাল, পেঁয়াজ ও আলু- এই তিনটির দাম বেশি ছিল৷ তবে চাল আমদানির ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে৷ সরকার দাম কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে৷ লাগাতার বন্যার কারণে আউশ ও আমন চালের উৎপাদন কম হয়েছে৷ উৎপাদন বাড়াতে না পারলে কোনো পণ্যেরই বাজার স্থিতিশীল থাকবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চাল, আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন আরো বাড়াতে কার্যক্রম চলছে৷