1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য: বাজারে কি প্রভাব পড়বে?

৮ মার্চ ২০২২

সরকার এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য দামে টিসিবির পণ্য দিচ্ছে। ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে শুরু হবে ১৫ মার্চ থেকে । চলবে এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত।

https://p.dw.com/p/48Ata
Bangladesch Menschenschlange vor LKWs mit Lebensmitt´len in Dhaka
ফাইল ফটোছবি: Abdul Halim

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাতে "যুদ্ধের বাজার” নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে? বিশ্লেষকরা বলছেন  টিসিবির পণ্যের কাভারেজ এলাকা বাড়ানো, গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। কারণ যুদ্ধের অজুহাতে পর্যাপ্ত পণ্য থাকার পরও একটি চক্র তা গুদামজাত করে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে।

টিসিবির মাধ্যমে একটি পরিবারকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দুইবার করে সয়াবিন তেল দুই লিটার, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনি¤œ দুই কেজি কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হবে। এবার যাদের কার্ড থাকবেনা তারা কিনতে পারবেন না।  তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হবে। যা বাজার দরের চেয়ে কম। বিশেষ করে সয়াবিবন তেল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকা লিটার।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, ৬ মার্চ থেকে ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে শুরু হবে ১৫ মার্চ থেকে । রোজায় যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে তার জন্য  আগেই এটা শুরু করা হয়েছে। ঢাকায় কার্ড দেয়া সম্ভব নয়। তাই আগের মতই ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে মোট ১৮৫টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন চার ধরনের পণ্য প্রতিটি ট্রাকে থাকছে দুই হাজার ৫০০ কেজি করে। ঢাকা শহরে ১২ লাখ পরিবারের কাছে এই পণ্য দেয়া হচ্ছে। ঢাকার বাইরে ৮৮ লাখ পরিবারকে। তারা ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট দুইবার পাবেন। 

হুমায়ুন কবির

তার কথা," ঢাকায়  অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে তাই কার্ড দেয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু ঢাকার বাইরে করোনার সময় যারা প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন তারাসহ নি¤œবিত্ত  আরো ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার কার্ড পাচ্ছে।”

এই কার্ড জেলা প্রশাসকদের তত্ত¡াবধানে হচ্ছে। টিসিবি এরইমধ্যে পণ্য পাঠাতে শুরু করেছে। কুঁড়িগ্রামের টিসিবি ডিলার জিয়াউর রহমান জানান," আমরা তালিকা পেয়ে গেছি। তালিকা অনুযায়ী আমরা ১৫ মার্চ থেকে পণ্য দেব। কার্ড যাদের নাই তারা পাবেন না।” তার কথা," তবে এর বাইরেও আরো অনেক মানুষ আছে যাদের টিসিবির পণ্য এখন প্রয়োজন। কিন্তু তারা পাবেন না।”

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন বলেন," আসলে কাভারেজ এরিয়া আরো বাড়াতে হবে। আর দেশের মানুষতো শুধু ওই চারটি পণ্যই কেনেন না। তারা তো আরো অনেক পণ্য কেনেন। আর দুইবারে যে পরিমাণ দেয়া হবে তাতে তাদের চাহিদা পুরণ হবেনা। ফলে এর ইতিবাচব  প্রভাব বাজারে পড়বে বলে আমার মনে হয়না। আর ঢাকা শহরে কার্ড না দেয়ায় এখন যে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে তা চলতেই থাকবে। একজন হয়তো দিনে দুই-তিনবার নেবেন। আরেকজন পাবেনই না।”

তার কথা, বাজারের পরিস্থিতির কারণে এখন নি¤œ মধ্যবিত্ত টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। তারা বঞ্চিত হবেন। তাই বাজারে প্রভাব ফেলতে হলে সরকারকে ভারতের মত স্থায়ী রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে যারা যুদ্ধের অজুহাতে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন," মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্য তেল আমদানি করে। তাদের নিয়ন্ত্রণ কেন সরকার করছে না!”

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

হুমায়ুন কবির অবশ্য দাবী করেন টিসিবির ন্যায্য মূল্যের এই পণ্য শুধুমাত্র নি¤œবিত্ত মানুষের জন্য। কিন্তু মান ভালো হওয়ায় নি¤œ মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এবার কার্ডে বিতরণ হলে এটার অবসান ঘটবে।  বাজারেও প্রভাব পড়বে।

তবে এরইমধ্যে এই কার্ড দেয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছেন জেলা প্রশাসকরা মেম্বার চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে কার্ড দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও  অর্থের বিনিময়ে কার্ড দেয়ার অভিযোগ আছে। হমায়ুন কবির  অভিাযোগের জবাবে বলেন," কার্ড আমরা দিচ্ছিনা। জেলা প্রশাসন দিচ্ছে। তারা বলতে পারবেন।” আর ডিলার জিয়াউর রহমান বলেন," আমরা বিতরণের সময় বুঝতে পারব অনিয়ম হয়েছে কী না।”

সয়াবিন তেল আমদানিতে আমদানিকারনকরা এরইমধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়েছেন। আর সরকার সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোজ্য তেল আমদানি, ক্রয় ও বিক্রিতে পাকা রসিদ লাগবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান শুরু করেছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন," আমদানির কর বা ভ্যাট কমানো সমাধান নয়। বাজার মরিটরিং উত্তম। সরকার যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে মনিটরিং-এর সেটা আরো জোরদার করতে হবে। আমদানির জন্য বেসরকারি খাতকেও উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে এই যুদ্ধের সময়ও বাজার কিছুটা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”

তার কথা, দেশে সাড়ে তিন কোটি পরিবার আছে। এরমধ্যে যদি এক কোটি পরিবার কম দামে টিসিবির পণ্য পায় তাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে মানুষের হাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হবে। করোনার সময়ে প্রধানমন্ত্রী নি¤œবিত্ত পরিবারকে যে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছেন সেইভাবে আবার প্রণোদনা দেয়া দরকার।

তিনি বলেন," বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি সার্বিক প্রক্রিয়া। এটা শুধু টিসিবির পণ্য দিয়ে হবে না। সবদিকে নজর দিতে হবে। গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তাও দিতে হবে। টিসিবির পণ্যের সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।”

আর টিসিবির পণ্য বিক্রিতে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার পাশাপাশি উপকার ভোগীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এটা সারাবছর চললে ভালো হয় বলে মনে করেন তিনি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য