বিচারপতির স্বামীকে সিআইডির জেরা, ফোন জমা দেয়ার নির্দেশ
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩প্রতাপ চন্দ্র দে-কে আবার ২২ ডিসেম্বর জেরা করার জন্য ডেকেছে সিআইডি। গত ১ ডিসেম্বর তাকে সাড়ে তিন ঘণ্টার জন্য জেরা করা হয়েছিল। শনিবার করা হয় নয় ঘণ্টা ধরে। সাড়ে বারো ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও তাকে আবার জেরা করবে সিআইডি। এছাড়া সোমবার তাকে মোবাইল ফোন জমা করতে বলেছে সিআইডি।
সিআইডি হলো রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটিভ ডিপার্টমেন্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীকে ডেকে এইভাবে জেরা করাটা আলাদা গুরুত্ব পেয়ে গেছে। কারণ, রাজ্য সরকারের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা এখন বিচারপতি সিনহার হাতে রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর সম্পদের হিসাব দেয়া নিয়ে রীতিমতো কড়াভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর বন্ধ খামে ইডি এই হিসাব বিচারপতির কাছে দিয়েছে।
আইন সংক্রান্ত খবরের পোর্টাল বার অ্যান্ড বেঞ্চের খবর অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি ভাট্টির বেঞ্চ জানিয়েছে, সিআইডি এই তদন্তের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। কোনো প্রভাব থাটাবার চেষ্টা হলেও তা সর্বোচ্চ আদালতকে জানাতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছে সিলবন্ধ খামে পেশ করতে হবে।
প্রতাপ চন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে অভিযোগ
বার অ্যান্ড বেঞ্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, জমি-বাড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে বিধাননগরের এক বিধবা বৃদ্ধার সঙ্গে তার কিছু আত্মীয়র বিরোধ দেখা দেয়। তার অভিযোগ, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে তার দাদা ও আত্মীয়রা। তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনতী মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পেশায় আইনজীবী প্রতাপ চন্দ্র দে এই বিরোধের ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে প্রভাব খাটান। মামলার তদন্ত যাতে বাধা পায় তিনি তার চেষ্টা করেছেন। বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধেও তিনি অভিযোগ করেছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, কোনোরকম প্রভাব ছাড়াই যাতে তদন্ত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মামলাকারীকে পুলিশি নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ঠিকভাবেই তদন্ত হচ্ছে। একটি রিপোর্ট তারা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দিয়েছে।
সিআইডির নির্দেশ
সিআইডি জানিয়েছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতাপ চন্দ্র দে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিলেন, তা তাদের কাছে জমা দিতে হবে। তার আগে ফোন ও অ্যাপের লক খুলে দিতে হবে।
তারপর ২২ ডিসেম্বর তাকে আবার সিআইডির কাছে আসতে হবে। সিআইডি তৃতীয় দফার জেরা করবে।
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলার আইনজীবী বিক্রম বন্দ্য়োপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ''কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের উপর আক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম। ২০১১ সালের পর থেকে মামলার রায় বিপক্ষে গেলে আক্রমণ হতে দেখছি। তার নিন্দা করছি। অমৃতা সিনহাকে কালিমালিপ্ত করা, মামলায় প্রভাবিত করার জন্য পরিবারের মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি। আমি বলব, ক্রিমিনাল কন্টেপ্ট হওয়া উচিত। বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের জন্য।''
আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন, ''সিআইডির কছে কোনো অভিয়োগ জমা পড়লে, সিআইডি তদন্তের জন্য যে কোনো মানুষকে ডাকতে পারে। তবে আমার আশঙ্কা পুলিশি বিবেক থেকে করছে না। তাদের হয়ত অন্য কোনো কেন্দ্র থেকে উত্তেজিত করা হচ্ছে। তার মাধ্যমে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে বিরক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। ২০১১-র পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা কাজে সিদ্ধহস্ত।''
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছেন, তদন্ত থেকে বাঁচার চেষ্টা হচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি কোথায় পৌঁছেছে এটা তার উদাহরণ। বিচারপতিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ''পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিলেই সেটা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে যায়, আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের অপব্যবহার, চেয়ারের অপব্যবহার করলে তা তো বিপ্লবী কাজকর্ম হতে পারে না। যতবড় প্রভাবশালী হন, কারও স্বামী যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন সেটা মেনে নেয়া য়ায় না। সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিতেই তো তদন্ত হচ্ছে।''
'প্রশ্ন উঠতে পারে'
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। কোনো ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে ,সিআইডি কাউকে জেরা করতেই পারে। এ ,সবই ঠিক, তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এনিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতেও পারে। অন্তত প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)