1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি

হোসাইন আব্দুল হাই৩১ অক্টোবর ২০১২

বিটগড়ে আটকা পড়লে সেখানকার রাজাকার নেতাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য রাজি করেন ফোরকান বেগম৷ আগরতলায় বাছাইকৃত নারীদের উচ্চতর গেরিলা প্রশিক্ষণে অংশ নেন৷ কেনেডির কাছে যুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা৷

https://p.dw.com/p/16ZqI
ছবি: Forkan Begum

‘‘আগরতলায় যাওয়ার জন্য মনি ভাই যখন লিখলেন যে, অনেকে আহত হয়েছে, এখানে সেবিকার অভাব৷ আমি যেন আমার সঙ্গীদের নিয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছাই৷ তখন আমি এবং আমার চাচাতো বোন নাসু মামুর সাথে আগরতলা রওয়ানা করি৷ কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্য বিটগড়ে গিয়ে আটকে গেলাম৷ সেখানে প‌ৌঁছে শুনলাম যে, পাক সেনারা আগেই একদিন ঐ গ্রাম থেকে মানুষদের ধরে নিয়ে গেছে এবং কিছু বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে৷ সেখানে সাত-আটদিনের জন্য আটকা পড়ে গেলাম৷ কারণ সিএন্ডবি রোড দিয়ে পার হওয়া যাচ্ছে না৷ পাক সেনারা খুব কড়াকড়িভাবে টহল দিচ্ছে৷ তার উপর প্রচণ্ড বর্ষা৷ এ অবস্থায় আমরা সেই এলাকায় যে রাজাকার বাহিনীর প্রধান এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল, ভুলক্রমে তার বাড়িতে গিয়ে উঠি৷ তবে আমরা সেখানে যে ক'দিন ছিলাম সেসময়ে তাকে অনেক করে বুঝিয়েছি এবং তার যে বাহিনী ছিল রাজাকার, সংবাদ বাহক এবং নৌকার মাঝি তাদেরকেও আমরা বুঝিয়েছি৷ যেন তারা পাকিস্তানিদের সহায়তা না করে বরং তাদের সাথে খাতির রাখে এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আগরতলা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, আবার একইসাথে যেসব মুক্তিযোদ্ধা আগরতলা থেকে আসছে তাদেরকেও যেন সহায়তা করে - সেজন্য তাদেরকে রাজি করালাম৷ এরপর আমরা আগরতলা গেলাম৷ ইতিমধ্যে সেই শান্তি কমিটির প্রধান তাঁর দুই ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধ করতে পাঠিয়েছিলেন৷'' এভাবে মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের কাজের কথা বলছিলেন বীর সাহসী নারী ফোরকান বেগম৷

Bangladesch Geschichte Freiheitskämpferin Forkan Begum und andere Flüchtlingen in Agartala in 1971
১৯৭১ সালে আগরতলায় ফোরকান বেগম ও অন্যান্যরাছবি: Forkan Begum

এর আগে ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে নিজের গ্রামের মানুষদের যুদ্ধের জন্য তৈরি করেন ফোরকান বেগম এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ পুটিনা বিদ্যালয় মাঠে পরের দিন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করেন৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি জানান, ‘‘সৌভাগ্যক্রমে আমাদের গ্রামে একজন বিমান বাহিনীর এবং দুই জন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন৷ তাঁদের সহায়তায় সেখানে খুব ভোর থেকে কলার ডাগা এবং মানকচুর বড় বড় গাছ কেটে এনে সেগুলো ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ আর খেতের জমি থেকে মাটির ঢেলা এনে গ্রেনেড চালানো শেখানো হয়৷ গ্রামের প্রশিক্ষিত তরুণদের সমন্বয়ে আমরা দশ ধরণের কাজের জন্য দশটি বাহিনী গড়ে তুলি৷''

আগরতলায় গিয়ে জিবি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এবং শরণার্থী শিবিরে সেবা দিয়েছেন ফোরকান বেগম৷ মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেখানে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেলে তিনি এবং মিনারা বেগম কেনেডির কাছে মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি তুলে ধরেন৷ এসময় কেনেডির কাছে তিনি বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন সেসব তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ করেন৷ তাঁদের অনুরোধে পরবর্তী সাতদিনের মধ্যেই কেনেডি বঙ্গবন্ধুর অবস্থান এবং অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন৷ বঙ্গবন্ধুর খবর জানার পর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও স্বেচ্ছাসেবকসহ সবাই আরো বেশি উৎসাহিত হন এবং যুদ্ধের কাজে আরো মনোযোগী হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ফোরকান বেগম৷

Week 44/12 Women 1: Forkan Begum (Part 2) - MP3-Mono

এছাড়া লেম্বুছড়া শিবিরে বাছাই করা আট-দশ জন সাহসী নারীকে নিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শুরু হলে সেখানে প্রশিক্ষণ নেন ফোরকান বেগম৷ সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ এই বিশেষ বাহিনীর সদস্যদেরকে দেশের ভেতরে গেরিলা হামলার জন্য পাঠাতে চেয়েছিলেন৷ সেজন্য ফোরকান বেগম এবং তাঁর সঙ্গীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই খালেদ মোশাররফ জানান যে, ফোরকান বেগমের ছবি পকেটে নিয়ে তাঁকে খুঁজে ফিরছে পাক সেনারা৷ তাই ঢাকায় তাঁকে অভিযানে পাঠানো সম্ভব নয়৷ সেজন্য ফোরকান বেগমের কাছ থেকে দেশের ভেতরে থাকা তাঁর প্রশিক্ষিত সঙ্গীদের যোগাযোগের ঠিকানা নিয়ে তাঁদেরকে গেরিলা অভিযানে কাজে লাগানো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি৷

স্বাধীন দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন ফোরকান বেগম৷ পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন অসমাপ্ত লেখাপড়া৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি৷ এরপরে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন ফোরকান বেগম৷ তাঁর চাকুরি জীবনে শ্রম মন্ত্রণালয়, যুব মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তবে ২০০৫ সালে চাকুরি জীবনে বঞ্চনার শিকার হন তিনি৷ চাকুরির পাশাপাশি বাংলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, সার্ক এর সদস্য দেশসমূহের গৃহস্থ কর্মীদের সমিতি সাবাহ, লায়ন্স ক্লাব, জাতীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত৷ এছাড়া লেখালেখির জগতেও রয়েছে তাঁর সরব পদচারণা৷ এখন পর্যন্ত তাঁর পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য