1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রজব আলি খুনের পর আর গ্রামে থাকতে পারিনি’

১০ অক্টোবর ২০১২

লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও মাতৃভূমির মুক্তির জন্য যুদ্ধ করার তাগিদ সমানভাবে উপলব্ধি করেছিলেন বাগেরহাটের যাত্রাদলের অভিনয় শিল্পী মেহেরুন্নেসা মীরা৷ ভিক্ষুক বেশে পাক সেনাদের শিবিরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷

https://p.dw.com/p/16N2x
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi

১৯৫২ সালের ১০ই মার্চ বাগেরহাট জেলার সরই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মেহেরুন্নেসা মীরা৷ পিতা তাসের উদ্দীন শেখ এবং মা হাজেরা বেগম৷ বাবা ছিলেন গ্রামের কৃষক৷ অভাব অনটনের সংসারে বড় হন মীরা৷ লেখাপড়ার সুযোগ পাননি তিনি৷ বরং স্থানীয় যাত্রাদলে যোগ দেন কিশোরী মীরা৷ যাত্রাদলে অভিনয় করে অর্থ উপার্জন করে সংসারে খরচ দিতেন৷ কিন্তু ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে যাত্রামালা বন্ধ হয়ে যায়৷

এসময় তিনি কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজে সম্পৃক্ত হন সে সম্পর্কে মীরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শেখ মুজিবের ভাষণের পর এলাকার স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা সবাই আলোচনা করতো৷ আমি সেখানে যেতাম, শুনতাম৷ ওরা আমাকে বলতো, তুমি মূর্খ মানুষ৷ এগুলো তুমি কী বুঝবা? আমি বলতাম, হ্যাঁ, আমি বুঝি না কিন্তু আবার তোমাদের চাইতে বেশিও বুঝি৷ তারপর যুদ্ধ শুরু হলে আমাদের গ্রামে পাক বাহিনী এবং রাজাকাররা ঘোরাঘুরি করতে শুরু করে৷ একদিন আমি হেঁটে যাচ্ছি তো দেখি একদল পাক সেনা যাচ্ছে৷ সেজন্য সবাইকে দেখি দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে৷ আমি বললাম, দৌড়াও কেন৷ ওরা আমাদের কী করবে? ওরাও মানুষ, আমরাও মানুষ৷ তো আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাক সেনারা জিজ্ঞেস করে, তোমার নাম কী? নাম বললাম৷ তখন জিজ্ঞেস করে তুমি কি মুসলমান? আমিও ছোটতে এক বিহারির বাড়িতে কাজ করতাম বলে কিছু উর্দু বলতে পারতাম৷ তো বললাম, মুসলমান না তো কী? আমি তো মুসলমান৷ এরপর দেখি এক রিকশাওয়ালাকে তারা মারবে৷ তখন আমি বললাম, ঐ লোক তো মুসলমান৷ দেখো না সুন্নাতি দাড়ি আছে৷ আমার কথা শুনে তাকে আর মারলো না৷ বরং তাকে ছেড়ে দিল৷''

Geeta Kar
নারীরাও সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে...ছবি: Motilal Adhikary

এছাড়া মীরার মা ওয়াপদা কলোনির এক কর্মকর্তার বাড়িতে কাজ করতেন৷ সেই কলোনিতে পাকসেনা ও রাজাকারদের আসা-যাওয়া ছিল৷ ফলে মীরার সাথে তাদের দেখা হতো৷ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম খোকন এই সুযোগটাকে কাজে লাগান৷ তিনি মীরাকে পাকসেনাদের হামলা, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার-অনাচারের কথা বোঝান৷ ফলে মীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে থাকেন৷ পাকসেনাদের ও রাজাকারদের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন৷ এ বিষয়ে মীরা জানান, ‘‘আমি অনেক সময় ভিক্ষুক সেজেও পাক সেনাদের শিবিরে যেতাম৷ ওদের কাছে গিয়ে খেতে চাইতাম৷ কিছু কথা বলতাম৷ ওরা একজন কাজের মহিলা জোগাড় করে দিতে বলে৷ তো আমাদের এলাকার বৃদ্ধ মহিলাকে সেখানে কাজের জন্য দিয়েছিলাম৷ তার কাছেও যেতাম এবং গল্প করতাম৷ আর সেসব খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতাম৷''

তবে মীরার দেওয়া তথ্য অনুসারে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় রাজাকার রজব আলিকে হত্যা করা পর, মেহেরুন্নেসা মীরার পক্ষে আর এলাকায় অবস্থান করা সম্ভব হয়নি৷ কারণ এই ঘটনার জন্য পাক সেনা ও রাজাকাররা মীরাকে সন্দেহ করতে থাকে৷

Meherunnesa Mira Part 1 off - MP3-Mono

মীরার ভাষায়, ‘‘রজব আলি কোন সময় বের হয়ে যায়, আর কোন সময় বাসায় ঢোঁকে এ তথ্য দেওয়ার পর আমাদের এখানকার এক হিন্দু ছেলে কেষ্ট তাকে গুলি করে মারে৷ এরপর আমি আর গ্রামে থাকতে পারিনি৷ কারণ তারা আমাকে সন্দেহ করল যে, এই মেয়ে ছাড়া এসব খবর আর কেউ পেতে পারে না৷ ফলে তারা আমার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের উপর চাপ দিতে থাকে৷ এমনকি আমার বাবার উপর অত্যাচার করতে থাকে৷ তখন আমাদের গ্রামের এক দারোগা সাহেবের ছেলে সিরাজুল হক আমাকে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে নিয়ে যায়৷ এরপর মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে বিভিন্ন কাজের ধরণ শিখিয়ে দেয়৷ সেই অনুসারে আমি কাজ করতে থাকি৷ অনেক সময় আমার হাতে ছাপানো লিফলেট দিয়ে দিয়েছে৷ আমি সেগুলো নিয়ে ফকির বেশে সাধনার মোড়ে গিয়ে কাগজগুলো চুপ করে ফেলে দিয়ে অন্য রিকশা নিয়ে চলে যেতাম খাদ্দার মোড়৷ আবার সেখান থেকে কলেজে গিয়ে কিছু কাগজ ফেলে দিয়ে চলে যেতাম গোপালঘাটি৷ তখন অন্ধকার হয়ে আসতো৷ আমি ঘাটে গিয়ে মাঝিকে আকাশ বলে ডাকতাম৷ সে বুঝতো যে মাঝিকে ডাকছি৷ সে তখন আমাকে নদীর ওপারে পৌঁছে দিত৷ আমি তখন হাঁটতে হাঁটতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে চলে যেতাম৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান