1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি

হোসাইন আব্দুল হাই১৭ অক্টোবর ২০১২

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস বাগেরহাট এলাকায় অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করেছেন অকুতোভয় নারী মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মীরা৷ কিন্তু এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই৷ সবজি বিক্রি করে দিন চলে তাঁর৷

https://p.dw.com/p/16RCK
ছবি: National Monument of Savar

‘‘একদিন হামিসার মুক্তিযোদ্ধা শিবির থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সবাই অভিযানে চলে গেছেন৷ আমি শিবিরে একা অনেকগুলো অস্ত্রপাতি ও গোলাবারুদ পাহারা দেওয়ার জন্য থেকে গিয়েছি৷ আমি যখন দেখলাম যে, গোলাগুলির শব্দ শিবিরের দিকে এগিয়ে আসছে, তখন প্রধান প্রধান অস্ত্র এবং গোলাবারুদ একটি নৌকায় বোঝাই করেছি৷ এরপর সেই নৌকা নিয়ে আমি হোগলাবনে গিয়ে লুকিয়ে থেকেছি৷ সারাদিন গোলাগুলি চলেছে৷ কিন্তু আমি সেখান থেকে একটুও নড়াচড়া করিনি৷ এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে গোলাগুলি থেমেছে৷ তখন আমি ভাবছি যে, আল্লাহর রহমতে এখন হয়তো বের হতে পারবো৷ কিন্তু একদিকে শীতকাল৷ তাছাড়া সারাদিন ভিজে রয়েছি৷ ফলে একেবারে কাহিল অবস্থা৷ নিরাপত্তার জন্য হোগলার ভেতর নৌকাটা ঢুকিয়ে রেখেছিলাম৷ এখন আর বের করতে পারি না৷ এদিকে ঠেলা দিলে নৌকার অন্যদিক মাটিতে আটকে যায়৷ আমি একা কোনভাবেই নৌকা খাল থেকে বের করে আনতে পারছিলাম না৷ কিছুক্ষণ পর মুক্তিযোদ্ধা দবির আমাকে দেখতে পান৷ তখন তিনি আমার ঘটনা শুনে বলেন যে, আমরা সবাই ভাবছি তুমি বোধহয় বেঁচে নেই৷ তখন আমি বললাম, আল্লাহ যাকে বাঁচিয়ে রাখে তাকে মারবে কে? বলো৷ তারপর তার সহায়তায় সবকিছু নিয়ে আমাদের শিবিরে ফিরে যাই৷'' এভাবেই যুদ্ধের সময়ের ভয়ংকর একদিনের কথা বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মীরা৷

অন্য একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল৷ তবে তাদের চেয়ে কিছুটা দূরত্বে এগিয়ে গেছেন মীরা৷ কিছুদূর এগিয়ে বুঝতে পারলেন যে, খালের অন্যপাশেই পাকসেনারা অবস্থান করছিল৷ ফলে মুক্তিযোদ্ধারা এদিকে আরো এগিয়ে আসলে সামনাসামনি যুদ্ধ হবে এবং তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশি ক্ষতি হবে৷ এ কথা ভেবে খালের উপরে থাকা বাঁশের সাঁকো সরিয়ে ফেলেন তিনি৷ ফলে পাক বাহিনী খালের এপারে আসতে পারেনি৷ তাঁর বুদ্ধিমত্তার কারণে সেই যাত্রায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান৷ এছাড়া আরো অনেকদিন ছদ্মবেশে ঘুরে ঘুরে পাক বাহিনীর অবস্থান জেনে এবং তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন৷ একদিন পাক বাহিনীর হামলার সময় গ্রামের নারী ও শিশুদের একসাথে নিয়ে দূরে গিয়ে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন মীরা৷ সেদিন প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো এখনও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাভরে শ্রদ্ধা জানায় বলে উল্লেখ করেন মীরা৷ এছাড়া তাঁর দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযানের পরিকল্পনা করতেন এবং সঠিক সময়ে ও কৌশলে শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতেন৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও যাত্রাদলের সাথে অভিনয় শিল্পে যোগ দেন মেহেরুন্নেসা মীরা৷ তবে স্বাধীন দেশে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও মীরার অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি৷ এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জপ্রায় মীরা৷ তাঁর চার ছেলে এবং দু'টি মেয়ে রয়েছে৷ কিন্তু ছেলেমেয়েরা কেউ কোন চাকুরি পায়নি৷ মীরাকে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে শাপলা, শাক কিংবা অল্প দামের সবজি বিক্রি করে জীবন ধারণ করতে হয়৷ প্রথমে মাসিক ৩০০ টাকা করে এবং বর্তমানে দুই হাজার টাকা করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও তা দিয়ে কোন স্থায়ী আবাস গড়তে পারেননি এই সাহসী ও ত্যাগী নারী মুক্তিযোদ্ধা৷ তিনি জানান, ‘‘আমি এখন জাতীয় ফুল শাপলা আর কলমি শাক বিক্রি করি৷ আমি থাকার জন্য একটা জায়গা পেয়েছি - সরকার দিয়েছে আমাকে৷ কিন্তু সেখানে থাকার উপায় নাই৷ কারণ নদীর পাড়ে৷ জোয়ারের পানি আসলে ডুবে যায়৷ সেখানে যে মাটি তুলে উঁচু করে বাড়ি করবো - সেই সামর্থ্য আমার নেই৷ আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা এবং আমার কষ্টের কাহিনী সবাই শোনে৷ কিন্তু কেউ কোন সাহায্য করে না৷ কেউ কোন চাকুরিও দেয় না৷''

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দেখতে চান এই অসহায় নারী মুক্তিযোদ্ধা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি চাই যে, আমি বেঁচে থাকতেই যেন রাজাকারদের ফাঁসি হয়৷ তাদের ফাঁসিটা দেখে যেতে পারলে আমার আর কোন দুঃখ নেই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য