ফরমালিন বন্ধে নির্দেশনা
১৬ জুলাই ২০১৪‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ' ২০১০ সালে ফলে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে৷ ঐ আবেদনের শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১০ মে হাই কোর্ট একটি রুল দেয়৷ ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ ফরমালিনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধে ৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন৷ মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে৷
রায়ে বলা হয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্রবন্দরে ‘কেমিকেল টেস্ট ইউনিট' স্থাপন করতে হবে, যেন আমদানি করা ফল রাসায়নিক পরীক্ষার পর বাজারে ছাড়া হয় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো কোনো ফল দেশে প্রবেশ করতে না পারে৷
আমে ফরমালিনসহ সবধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে রাজশাহীসহ দেশের অন্যান্য আম উৎপাদনকারী এলাকায় আমের মৌসুমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷
কমিটি করে সারাবছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ করতে হবে যেন কেউ রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ফল বিক্রি করতে না পারে৷
ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সার্কুলার জারি করতে বলেছে হাইকোর্ট, যাতে এর মূল হোতাদের বিচার করা যায়৷
অবশ্য এরইমধ্যে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের বিধান রেখে গত ৩০ জুন ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৪' এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে খসড়া আইনে৷
এই আইন পাস হলে লাইসেন্স ছাড়া কেউ ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহণ, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবে না৷ লাইসেন্স প্রাপ্তরা ফরমালিনের হিসাব দেখাতে বাধ্য থাকবেন এবং নিয়মিত ফরমালিন কেনাবেচার হিসাব রাখবেন৷
নীতিমালা নেই
বাংলাদেশে ফরমালিন আমদানিতে এখনো কোনো নীতিমালা নেই৷ আমদানি নীতি অনুযায়ী কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই ফরমালিন আমদানি করা যায়৷ তবে সাধারণত মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন আমদানির কথা বলা হয়৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে ৩৮টি প্রতিষ্ঠান ২০৫ টন ফরমালিন আমদানি করেছে৷
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের হিসাব অনুযায়ী বছরে বাংলাদেশে ফরমালিনের চাহিদা ৫০ টনের বেশি নয়৷ অথচ আমদানি করা হচ্ছে চাহিদার চেয়ে চার গুণ বেশি৷ এই বাড়তি ফরমালিন ফলমূলে ব্যবহার করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ দুই বছর ধরে ৫০টি পণ্যের ১০,২৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করে৷ নমুনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত ৫০টি পণ্যের ৪৭টিতে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার চেয়েও বেশি মাত্রার ফরমালিনের মিশ্রণ রয়েছে৷ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত আম, লিচু ও জামে বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি পেয়েছে৷
গত ১১ জুন থেকে পুলিশ ঢাকায় ফরমালিন বিরোধী অভিযান শুরু করার পর ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে তা থমকে গেছে৷ হাইকোর্টে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হাইকোর্ট নিয়মিত পদক্ষেপের কথা বলেছেন৷ সুবিধা অনুযায়ী অনিয়মিত কোনো ব্যবস্থা নয়৷''