ফল বিক্রি না করার হুমকি!
২১ জুন ২০১৪গত ১১ই জুন মৌসুমী ফল, যেমন আম, লিচু, জামসহ সব ধরণের ফলে বিষাক্ত ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ৷ রাজধানীতে তাঁরা ৮টি পয়েন্টে ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযান চালাচ্ছেন সেই থেকে৷ অভিযানে এ পর্যন্ত ফরমালিন মেশানো বিপুল পরিমাণ ফল আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে৷ তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আটক ও জরিমানাও করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার ফল ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা৷
শুক্রবার ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন যে, ফরমালিন বিরোধী অভিযানের নামে ফল ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে৷ তিনি দাবি করেন, অভিযানে ফরমালডিহাইড-৩০০ নামের একটি ভুল যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন শনাক্তের নামে দেশি-বিদেশি ফলমূল ধ্বংস করা হচ্ছে৷ যার ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন৷
সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে ফরমালিনবিরোধী অভিযানে কোটি কোটি টাকার ফল জব্দ ও নষ্ট করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানাও করা হয়েছে৷ কিন্তু যে ফরমালডিহাইড-৩০০ যন্ত্রের মাধ্যমে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা আসলে তৈরি হয়েছে বাতাসে ফরমালডিহাইড বাষ্প পরিমাপের জন্য, তাজা ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য নয়৷ ইতিমধ্যে খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (বিসিএসআইআর)-এর সংশ্লিষ্ট গবেষক ও কেমিস্টরা এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ অথচ বিতর্কিত এই যন্ত্র ব্যবহার করেই ফল নষ্ট করা হচ্ছে৷ আর ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ম করে জেল জরিমানা দেয়া হচ্ছে৷
তাই সংবাদ সম্মেলনে ‘ভুল' যন্ত্রের মাধ্যমে ফরমালিনের মাত্রা পরীক্ষার নামে ফলমূল ধ্বংস ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকান ও আড়ত বন্ধ রেখে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা৷ সোমবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের কথায়, আসন্ন রমজানেও তাঁরা বাজারে ফল সরবরাহ করবেন না৷
ফল আমদানিকারকরা বলেন, বাণিজ্য নীতিমালা মেনেই ফল আমদানি করা হয়৷ এ সব ফল রেফ্রিজারেটর কনটেইনারে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমদানি করা হয়ে থাকে৷ তাজা ফল চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর কর্তৃপক্ষ ফলের কনটেইনার খুলে ফলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে পাঠায়৷ এরপর সেখানে সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়৷ তাই এতে ফরমালিন বা রাসায়নিক পদার্থ থাকার প্রশ্নই আসে না৷
ওদিকে, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফল উৎপাদকারী, বিশেষ করে আম ও লিচু উৎপাদনকারীরা এই ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন৷
অন্যদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বিএসটিআই তাদের ফরমালিন বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে৷ পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ফরমালিন মেশানোর অপরাধ প্রমাণ হলে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করা হবে৷