প্রয়োজন জনসচেতনতা
৩ জুলাই ২০১৩বাংলাদেশে ৭০ ভাগ খাদ্যদ্রব্যই ভেজাল৷ ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটট ১০৮ ধরনের খাদ্যদ্রব্য নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে৷ তাতে দেখা যায়, বাজারে বিক্রি হওয়া ভোগ্যপণ্যের ৭০ ভাগই ভেজাল৷ ইনস্টিটিউটের অ্যানালিস্ট চন্দ্রশেখর সাহা ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোজ্য তেল, দুধ, ঘি, কনডেন্সড মিল্ক-এর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে ভেজাল সবচেয়ে বেশি৷ তিনি বলেন, ভোজ্য তেলে ফার্নেস অয়েল ভেজাল দেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তারা৷ আর সরিষার তেল আসলে সরিষার তেল নয়৷ পাম অয়েলে কেমিক্যাল মিশিয়ে এর রঙ এবং গন্ধে পরিবর্তন আনা হয়৷ ঘিও তৈরি হয় কেমিক্যাল দিয়ে৷
চন্দ্রশেখর সাহা জানান, বাজারে যে সব কনডেন্সড মিল্ক পাওয়া যায় আসলে তাতে দুধের লেশ মাত্র নেই৷ এছাড়া, প্যাকেটজাত দুধে দুধের অনেক উপাদানই নেই৷ তিনি জানান, গুড়া মরিচ, হলুদ, লবণে ভেজাল দেয়া যেন এখন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে৷
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভেজাল খাবার দেশের মানুষের জন্য এখন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এসব খাবার খেয়ে মানুষ প্রথমে নানা ধরনের পেটের পীড়া এবং চর্মরোগ ও কিডিনির রোগে ভোগে৷ দীর্ঘমেয়াদে, বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না৷ তাদের অনেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়৷ আর ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের রঙ এবং কেমিক্যালের কারণে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়৷
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট স ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রথমবার ভেজালের জন্য সাত বছর এবং দ্বিতীয়বার ভোজালের জন্য ১৪ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে যে নতুন আইন করা হয়েছে, তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য৷ তবে ভেজাল প্রতিরোধে এই আইন কার্যকর করতে ‘মনিটরিং' জোরদার করতে হবে৷ এছাড়া, আইনের বিধান অনুযায়ী শস্তি দিতে হলে এর আলামত ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে তদন্তকারীদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে৷ তিনি বলেন, এর পাশাপাশি ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, কিছু কিছু বাজারে এখন ভোগ্যপণ্যে ফরমালিন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ তা জানেন না৷ তাঁদের জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ আরো যেসব পণ্যের ভেজাল তাত্ক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করা যায়, বাজারগুলোতে তা পরীক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে৷
চন্দ্রশেখর সাহা মনে করেন, প্রতিটি বাজারেই বিএসটিআই বা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত নজরদারি থাকা প্রয়োজন৷ তবে তিনি জানান, বিএসটিআই সব ধরনের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে না৷ বিশেষ করে যে ভোগ্যপণ্য খোলা থাকে, তা তারা দেখে না৷ এটা ভেজালকারীদের সুবিধা করে দেয়৷