যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৩০ জুন ২০১৪মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া নতুন এই আইনের নাম ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন - ২০১৪'৷ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই আইনের চূড়ান্ত খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়৷ বলা বহুল্য, সংসদে পাশ হওয়ার পর এই আইন কার্যকর হবে৷
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, আইন অনুযায়ী কেউ লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবে না৷ এছাড়া লাইসেন্স প্রাপ্তদের প্রয়োজনে ফরমালিন ব্যবহারের হিসাব দিতে হবে৷
লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে এই আইনে৷ লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে সাত থেকে দুই বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় প্রকার দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ফরমালিনের যন্ত্রপাতির জন্যও বিধান রাখা হয়েছে – এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ফরমালিন উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়, সে রকম যন্ত্রপাতি রাখলে ১০ থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে৷
শুধু তাই নয়, লাইসেন্স ছাড়া বা অবৈধভাবে ফরমালিন দখলে রাখলে সাত থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধানও করা হয়েছে৷
সচিব জানান, ফরমালিনের অপব্যহার রোধে এ আইনে মোবাইল কোর্ট বিচার করতে পারবে৷ অবশ্য শাস্তির পরিমাণ বেশি হলে মোবাইল কোর্ট সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা স্থানান্তর করতে পারবে৷
ফরমালিন, ফরমালডিহাইড, প্যারা-ফরমালডিহাইড বা এর যে কোনো মাত্রার সলিউশন বা দ্রবণ ইত্যাদি ফরমালিনের সংজ্ঞা এ আইনের আওতায় আসবে৷ তবে আইন হওয়ার পর আরো বিধি তৈরি করে এর আওতা নির্ধারণ করা হবে৷
এ আইনের আওতায় যে অপরাধ আমলযোগ্য, সেক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট ছাড়াই আসামিকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে৷
সচিব বলেন, ‘‘আইনের মাধ্যমে ফরমালিনের উৎপাদন, আমদানি, ব্যবহার ও মজুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও অপব্যবহার রোধে এই আইন কাজ করবে৷ ফরমালিনের অপব্যবহার এখন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই ফরমালিনের অপব্যবহার রুখতে এবং মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এ আইন করা হচ্ছে৷''
মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংসদের চলতি অধিবেশনেই এই আইন পাস হবে বলে আশা করেন৷ তিনি জানান, এ আইনের মাধ্যমে প্রতি উপজেলা ও জেলায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ কমিটি করা হবে৷
উল্লেখ্য বাংলাদেশে শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংসসহ পচনশীল ভোগ্যপণ্য তাজা রাখতে ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে৷ তাই এর অপব্যবহার বন্ধে সাধারণ মানুষ, ভোক্তা, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন৷ গত ১১ই জুন থেকে ঢাকায় পুলিশ ফরমালিন বিরোধী অভিযান শুরু করলেও, কার্যকর আইন এবং অপরাধীরা সংঘবদ্ধ হওয়ায় তা তেমন কাজে আসছে না৷