‘পুটিনফ্যায়াস্টেয়া' মানে জানেন?
১০ এপ্রিল ২০২২জার্মান শব্দ ‘ফ্যায়াস্টেহেন' মানে বোঝা বা বুঝতে পারা৷ ফ্যায়াস্টেহেনের বিশেষ্য হচ্ছে ‘ফ্যায়াস্টেয়া', অর্থাৎ যিনি বুঝতে পারেন৷
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখলের পর জার্মানিতে ‘পুটিনফ্যায়াস্টেয়া' টার্মটি প্রথম চালু হয়৷ ঐ বছরের এপ্রিলে ফোর্বস ম্যাগাজিনে একটি ব্লগের শিরোনামে এটি ব্যবহার করেছিলেন হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক পল গ্রেগরি৷ শিরোনামটি ছিল ‘এম্পেথাইজিং উইথ দ্য ডেভিল: হাও জার্মানিস পুটিন-ফ্যায়াস্টেয়াস শিল্ড রাশিয়া'৷ রাশিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির খারাপ রেকর্ড এবং ক্রাইমিয়া দখল সত্ত্বেও জার্মানির কিছু শীর্ষ রাজনীতিবিদ কীভাবে রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছেন, ব্লগে তা তুলে ধরা হয়েছিল৷
পল গ্রেগরি তার লেখায় জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর (১৯৯৮-২০০৫) গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারকে অন্যতম ‘কুখ্যাত পুটিনফ্যায়াস্টেয়া' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ শ্রোডার চ্যান্সেলর থাকার সময়ই আলোচিত নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ ক্ষমতা ছাড়ার পর শ্রোডার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা রোজনেফটের সুপারভাইজারি বোর্ডের প্রধান হন৷ পুটিন তার ব্যক্তিগত বন্ধু বলে মনে করা হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরও শ্র্যোডার রাশিয়ার সমালোচনা করে কিছু বলেননি৷ তাই কিয়েভের কাছে বুচায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার চিত্র সামনে আসার পর শ্র্যোডারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উঠছে৷
২০২১ সালের জানুয়ারিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে এমন ওয়েবসাইট ‘রিডল'-এর এক প্রবন্ধে পুটিনফ্যায়াস্টেয়া টার্মটি ব্যবহার করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ দিমিত্রি স্ট্র্যাটিভস্কি৷ রাশিয়ার গ্যাসের উপর জার্মানির নির্ভরতা সমর্থনের জন্য তৎকালীন সিডিইউ নেতা (ম্যার্কেলের দল) আরমিন লাশেটকে ‘ম্যার্কেলিয়ান পুটিনফ্যায়াস্টেয়া' হিসেবে দেখা উচিত কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেন স্ট্র্যাটিভস্কি৷
পুটিনফ্যায়াস্টেয়া টার্মটি নিয়ে সম্প্রতি উইকিপিডিয়ায় একটি ইংরেজি পাতাও খোলা হয়েছে৷ এতে বলা হয়, পুটিন পুটিনফ্যায়াস্টেয়া হচ্ছেন সেই রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি যিনি বা যারা পুটিনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন৷ অর্থাৎ পুটিন যেভাবেইরাশিয়া শাসন করুন না কেন পুটিনফ্যায়াস্টেয়ারা বলবেন ‘‘হ্যা ঠিক আছে, কিন্তু আপনাকে পুটিনের অবস্থাটা বুঝতে হবে৷''
এছাড়া রাশিয়ার সমালোচনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পুটিনফ্যায়াস্টেয়ারা পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য নিপীড়নের বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে পারেন৷ যেমন রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার সঙ্গে তারা হয়ত ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলার (আরেকটি অবৈধ যুদ্ধ) তুলনা করতে পারেন৷
রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখলের পর জার্মানির কিছু রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে পপুলিস্ট দলের, পুটিনফ্যায়াস্টেয়া বলে পরিচিতি পেয়েছিলেন৷ যদিও এখন হয়ত তারা সেই অবস্থান থেরে সরে এসেছেন কিংবা প্রকাশ্যে সমর্থন করা থেকে বিরত আছেন৷
জার্মানির উগ্র ডানপন্থি দল এএফডিসহ ইউরোপের অনেক উগ্র ডানপন্থি দলের সদস্যরা সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছিলেন৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এএফডি দলের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভাজন দেখা গিয়েছিল৷
সারাহ হুকাল/জেডএইচ