নাৎসি শিবিরের রক্ষী
১৭ মার্চ ২০১২নাৎসি আমল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে বহুদিন৷ কিন্তু ইতিহাস যে কাউকে ক্ষমা করে না, তারই প্রমাণ হিসেবে যেন দেমিয়ানুকের মতো অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হয়ে থাকে৷ ৯১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের পরলোকগমনটা বড় কথা নয়৷ কিন্তু অধিকৃত পোল্যান্ডে নাৎসিদের সোবিবোর বন্দীশিবিরে ২৭,৯০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে৷ সালটা ১৯৪৩৷ দেমিয়ানুক সে'সময় ছিলেন ঐ শিবিরের রক্ষীদের একজন৷ তিনি যে কোনো বন্দীর উপর নিপীড়ন করেছেন অথবা কোনো বন্দীকে হত্যা করেছেন, তার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না৷ তা সত্ত্বেও মিউনিখের আদালত তাকে মৃত্যুযজ্ঞের সহযোগী হিসেবে অপরাধী নির্দিষ্ট করে এবং সাজা দেয়৷ দেমিয়ানুক মামলার অভিনবত্ব ছিল সেখানেই৷
দেমিয়ানুকের জন্ম ইউক্রেইনে৷ সোবিবোরের পর দেমিয়ানুক জার্মানির ফ্লসেনবুর্গ বন্দীশিবিরেও এক বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন৷ সেই সময় ফ্লসেনবুর্গে প্রাণ হারান প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ - রোগে কিংবা অনশনে, অথবা নির্বিচার হত্যায়৷ সোবিবোর ছিল সরাসরি মৃত্যুশিবির৷ ফ্লসেনবুর্গ ছিল যাকে বলা হতো শ্রমশিবির৷ সে শ্রমশিবিরে বন্দীদের ক্রীতদাসের মতো শুধু বাঁচিয়ে রাখা হতো - তাও যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা চরম ক্লান্তি, মহামারী, ক্ষুধা এবং অমানুষিক সাজার সঙ্গে যুঝতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত৷
সেই বন্দীশিবিরের কর্মী দেমিয়ানুক যুদ্ধের পর বছর ছয়েক জার্মানিতেই থাকেন৷ তারপর স্বদেশে ফিরতে অপারগ ‘‘উদ্বাস্তু'' হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবার অনুমতি পান৷ সেখানে ওহাইও'তে একটি গাড়ি তৈরীর কারখানাতে কাজ করতেন দেমিয়ানুক৷ ১৯৮৬ সালে তাকে ইসরায়েলে পাঠানো হয় বিচারের জন্য এবং সেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ কিন্তু ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত সেই রায় বাতিল করায় আবার ওহাইও'তে ফেরেন দেমিয়ানুক৷ অতঃপর যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে তার বিরুদ্ধে মামলা আনা হয় এবং ২০০৯ সালে তাকে জার্মানিতে বহিষ্কার করা হয়৷
১৮ মাস বিচার প্রক্রিয়ার পর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন দেমিয়ানুক, যে দণ্ড তাকে আর ভোগ করতে হল না৷ তবে এ'কাহিনি যে সভ্যতা তাকে দণ্ড দিয়েছে, সেই সভ্যতার মনুষ্যত্ব প্রমাণ করে বৈকি৷ কেননা সোবিবোর, ফ্লসেনবুর্গে সভ্যতা ও মনুষ্যত্বের অন্ত ঘটেনি৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: মারিনা জোয়ারদার