‘নারী বাঁচুক তার অধিকার নিয়ে, সম্মানের সাথে'
২৫ মে ২০১৫শেখ রোকন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘একজন নারী উত্যক্তকারী যখন পার পেয়ে যায়, তখন তা আরও নারী নিগ্রহের জন্ম দেয়৷ এক নারী নিগ্রহকারী যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তখন সমাজে অনেক ধর্ষণের ঝুঁকি তৈরি করে৷ বাংলাদেশেও একই ধরনের অপরাধ কী ক্রমোবর্ধমান হারে ঘটে চলছে, দেখুন –
২১ মে, ২০১৫: জনাকীর্ণ রাজপথ থেকে গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ৷
১৩ মে, ২০১৫: ময়মনসিংহে চলন্ত বাসে এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টা; বাঁচতে গিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত৷
১১ মে, ২০১৫: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হন এক নারী৷
০৮ ফে. ২০১৫: সাভারে চলন্ত বাসে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে দুই নারী লাফিয়ে পড়ে আহত৷
২২ ফে. ২০১৩: সাভারে চলন্ত বাসে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে এক নারী নিহত৷
২৪ জা. ২০১৩: মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে এক নারী ধর্ষিত৷
এ তো শুধু চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের তালিকা৷ গাড়ির বাইরেও ধর্ষিত হয়েছে অনেক নারী৷ পার পেয়ে যাওয়া ধর্ষকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে৷ আমাদের সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে খারাপ সময় চলছে; কিন্তু আসছে আরও খারাপ সময়৷ সামাজিক ইস্যুতে নির্লিপ্ত থেকে কেবল রাজনৈতিক ইস্যুতে চিংড়ি মাছের মতো উৎসাহী সমাজের কপালে ভালো কিছু থাকা উচিত হবে না৷''
নাবিলা আশরাফ আলী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে৷ যদি জন্মেছিই এই দেশে, যেখানে নারীর প্রতি রাষ্ট্রেরও ন্যূনতম মর্যাদাবোধ, সম্মানবোধ নাই, সেখানে আর কী-ই বা করার আছে আমার? আমাদের? আর হ্যাঁ, চোখ দিয়ে ধর্ষণ করবে যারা, সেই সব পুরুষকে বলছি, সাবধান হোন, খুঁচিয়ে চোখ তুলে উপড়ে নেবো এইবার!''
সালেক আহমেদ লিখেছেন, ‘‘মাইক্রোবাসে ধর্ষণ, বাসে ধর্ষণ, মেলায় নারী নির্যাতন ইত্যাদি খুব সাধারণ ব্যাপার ক্ষমতাবানদের কাছে, হচ্ছে না কোনো বিচার৷ আল্লাহ না করুক, ঐ ক্ষমতাবানদের পরিবারেরর কেউ যদি এ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় নাটকের শেষ দৃশ্যের মতো৷ সত্যি হচ্ছে এরূপ ঘটনা চলতে থাকবে, বন্ধ হবে না বরং বাড়বে৷কারণ আমরাই চাই না, এটা বন্ধ হোক, চাইলে প্রথম ঘটনার সময়ই উপযুক্ত তাৎক্ষণিক বিচার করা হতো দল, মত, সমাজ নিরপেক্ষ থেকে৷''
মিঠুন চাকমা সামহয়্যার ইন ব্লগে লিখেছেন, ‘‘এক বিধ্বস্ত মহিলা, তরুণী এক কিশোরী, একা, কিছুক্ষণ আগে যার শরীরে পাশবিকতার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সেই তরুণী একা, বিচার চাইতে ঘোরেন থানা থেকে থানায়৷ কী দুর্দান্ত সাহস ও মানসিক ধৈর্য স্ট্যামিনা থাকলে তা সম্ভব হতে পারে! জয়তু হে সাহসিনী তরুণী!''
শাহেদ শাহরিয়ার জয় একই ব্লগে লিখেছন, ‘‘ইদানীং আমাদের দেশে ধর্ষণের মহামারি লেগেছে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে,কিছু মানুষ এই অবস্থার ওপর ভর করে সস্তায় নাম কামাতে ব্যতিব্যস্ত৷ কোনো নারী যখন ধর্ষণের শিকার হয়, সেটার প্রেক্ষাপট নিয়ে শুরুহয় সমালোচনা আর সমালোচনার জল গড়াতে গড়াতে গিয়ে উপচে পরে হয়ত কোনো একটা নির্দিষ্ট গোষ্টী কিংবা নির্দিষ্ট একটা ধর্ম নয়ত বা পুরুষশাসিত সমাজের ওপর৷ এই যে এত্ত ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি, এত মাতামাতি, একজনকে নিয়ে অন্যজনের তির্যক মন্তব্য এত কিছুর ফল কিছুই শেষ পর্যন্ত হয় না৷ ধর্ষকের চেতনায় জোর আরো বাড়ে, বাড়ে ধর্ষিতার সংখ্যাও৷ এই অবোধ রাষ্ট্র ব্যবস্থার যাতে বোধেদয় হয় এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে৷
মো. গালিব মেহেদী খাঁন একই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘যৌন সন্ত্রাস বৃদ্ধির পেছনে প্রধান যে কারণগুলি দৃশ্যমান তার প্রথমটি হলো বিচার হীনতার সংস্কৃতি৷ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ আর যদিও বা দু-একটি ক্ষেত্রে বিচার হচ্ছে তার তেমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে না৷ কাজেই যারা এই যৌন সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তারা এক ধরনের সবুজ সংকেত পেয়েই যায় যে সামাজিক বেড়াজালের মাঝে পরে প্রথমত মেয়েটি প্রকাশ করবে না আর যদি প্রকাশ করেও ফেলে বিচার হবে না৷ এই অবস্থায় এ দেশে যৌন সন্ত্রাস ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক৷
আমরা সমাজে নারীর সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানাই৷ আর সেটা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের৷ সেটা যা রাষ্ট্র করতে পারছে না এর দায় নিতে হবে যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্বে আছেন তাদেরই৷ নারী বাঁচুক তার অধিকার নিয়ে, সম্মানের সাথে৷
এই ঘটনাটি নিয়েও টুইটারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ জাহেদ মাদ্রিদিষ্টা লিখেছেন, হঠাৎ করেই বাংলাদেশে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে৷ ব্যাপারটা কি অদ্ভুত৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না৷
মনিরুল আলম লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের ঢাকায় আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে৷''
লেখিকা তসলিমা নাসরিন এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘বাসে গণধর্ষণ৷ ধর্ষণের পর মেয়েটিকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা৷ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ এ যেন ঠিক দিল্লির ধর্ষণের ঘটনা৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ