যৌন নিপীড়ন বলতে আইনে যা বলা আছে
১৮ মে ২০১৫
বিশ্লেষকরা মনে করেন এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন হলে এধরণের ঘটনা কমে আসবে৷
ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে গত ৫মে৷ তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নিয়ে উলটো ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে৷ আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিভাবকরা গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন৷ ফলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়৷ কমিটি নির্ধারিত দিন শনিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় স্কুলে ব্যাপক হট্টগোল হয়৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সেদিন স্কুলের উপাধ্যক্ষ জিন্নাতুন নেসাকে সরিয়ে দেয়া হয় তাঁর পদ থেকে৷ রবিবার তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়৷ তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে তা প্রকাশ করা হয়নি৷
স্কুলের গভর্নিং বডি এবং তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. ম তামিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা যৌন নিপীড়নের কোনো প্রমাণ পাইনি৷ আমরা তথ্য পেয়েছি এক কর্মচারী ছাত্রীটির গলায় চাকু ধরেছিল৷ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ আর তার পরিবারও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেনি৷ একটি মহল স্কুলের ক্ষতি করার জন্য যৌন হয়রানির ইস্যু তৈরি করছে৷'' কেন ছাত্রীটির গলায় চাকু ধরা হয়েছিল? প্রশ্ন করলে ম তামিম তার কোনো জবাব দিতে পারেননি৷
নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানেই সমস্যা৷ যৌন নিপীড়ন বলতে আইনে কী আছে তা জানেন না অনেকেই৷ তারা মনে করেন নারী ধর্ষিত না হলে যৌন নিপীড়ন হয় না৷'' তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালের আইনে অসত্ উদ্দেশ্যে নারীর যে-কোনো অঙ্গ স্পর্শ করাই যৌন নিপীড়ন৷ এমনকি নারীর পোশাক ধরে টান দেয়া, ধাক্কা দেয়া এগুলোও যৌন নিপীড়ন৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওই কর্মচারী কেন ছাত্রীর গলায় চাকু ধরেছে? তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না যে যৌন নিপীড়ন হয়নি৷''
অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস, শিল্প কারখানা এমনকি পথেঘাটে, মার্কেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে৷ কিন্তু আইন না জানায় আমরা অনেকই তাকে যৌন নিপীড়ন বলছিনা৷''
বাংলাদেশে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে একটি নির্দেশনা দেয়৷ আর তাতে বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী রয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানে একজন নারীর নেতৃত্বে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কমিটি থাকতে হবে৷ আর কমিটির মোট সদস্যদের মধ্যে নারীদের প্রাধান্য থাকতে হবে৷ একটা বাক্সে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রতি তিনমাস পর ওই বাক্স খুলে যদি কোনো অভিযোগ পান তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে কমিটি৷ আর তদন্তে গোপনীয়তা রাখতে হবে৷ কেউ চাইলে সরাসরিও কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন৷
কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানান এলিনা খান৷ তিনি জানান, ‘‘কিছু প্রতিষ্ঠানে এধরণের কমিটি থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই৷''
বাংলাদেশ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজে অনেক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় না৷ স্কুল কলেজের গভর্নিং বডি ধামাচাপা দেয়৷ আর কেউ অভিযোগ করলে অনেক সময়ই উলটো হেনস্তা হতে হয়৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে স্কুল থেকে টিসি দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল৷''
জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘‘ঢাকা কেন, বাংলাদেশের কোনো স্কুল কলেজেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি নেই৷ এটা হওয়া প্রয়োজন৷ আর এর সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা প্রয়োজন জেন্ডার নীতিমালা৷''