‘দেশ মা, পতাকা মায়ের আঁচল'
১১ জুন ২০১৪জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ফুটবল সমর্থকদের তাঁদের প্রিয় দলের পতাকা নামিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছেন৷''
অন্যদিকে, সংবাদ সংস্থা এএফপি লিখেছে, ‘‘বিশ্বকাপ ফুটবলের পতাকাকে লাল কার্ড দেখিয়েছে বাংলাদেশ৷'' বাংলাদেশের অনেক বাড়ির ছাদে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টটিতে৷ সেখানে আরো বলা হয়েছে, ‘‘ক্রিকেট পাগল এই জাতি ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাচ চলার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে মারামারির পর্যায়ে চলে যায়৷''
এ নিয়ে ব্লগ ও ফেসবুকেও অনেকে অনেক আলোচনা করেছেন৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে বদিউজ্জামান মিলন প্রশ্ন রেখেছন, ‘‘কেন নামাতে হবে বিদেশি পতাকা?''
তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ সকালে ‘প্রথম আলো'-য় নিউজটি দেখে মেজাজটাই বিগড়ে গেল৷ সোমবার সন্ধ্যায় তথ্য অধিদপ্তর থেকে মাইকে যশোর শহরে এবং গতকাল দিনব্যাপী জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকে বিদেশি পতাকা নামানোর নির্দেশনা প্রচার করা হয়৷''
মাননীয় জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘দেশপ্রেম ও পতাকা সম্পর্কিত আইনের দোহায় দিয়ে আপনি যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, সেই ‘পাওয়ার' ও ‘অ্যাবিলিটি' আপনার আছে৷ কিন্তু আপনি কি এটা ভেবে দেখেছেন যে আপনি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করছেন? ...যখন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন তখন কোনোদিন বিশ্বকাপের সময় হলের টিভি রুমে ঢু মেরেছেন কিনা সন্দেহ৷ জনাব জেলা প্রশাসক, বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এ সব দলের কেউ বাদ পড়লে আপনা-আপনিই পতাকা নেমে যাবে৷ তখন আপনাকে মাইকিং করা লাগবে না৷ এক সপ্তাহ, বড় জোর দশ-পনের দিন এই উন্মাদনা নিয়ে থাকতে চায় বাঙালি৷''
একই ব্লগে আব্দুল্লাহ শুভ লিখেছেন, ‘‘মতিউর রহমান – উনাকে চিনছেন তো? তেমন কিছু করেন নাই! শুধু জীবনটা দিয়ে দেশের পতাকাটা নিয়ে এসেছিলেন! মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখেছিলেন৷ তার কিছু অংশ এখানে দিলাম –
‘প্রিয়তমা মিলি, ...এই চিঠি যখন তুমি পড়ছো, আমি তখন তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে৷ ঠিক কতটা দূরে আমি জানি না৷....আমার কন্যারা যদি কখনো জিজ্ঞেস করে, বাবা কেন আমাদের ফেলে চলে গেছে? তুমি তাদের বলবে, তোমাদের বাবা তোমাদের অন্য এক মা-র টানে চলে গেছে....যে মা-কে তোমরা কখনো দেখো নি৷ সেই মা-র নাম বাংলাদেশ৷ মিলি....আমি দেশের ডাককে উপেক্ষা করতে পারিনি৷ আমি দেশের জন্যে ছুটে না গেলে আমার মানব জন্মের নামে সত্যিই কলঙ্ক হবে৷ আমি তোমাদের যেমন ভালোবাসি, তেমনি ভালোবাসি আমাকে জন্ম দেওয়া দেশটাকে...৷ আমি আবার ফিরবো মিলি....আমাদের স্বাধীন দেশের পতাকা বুক পকেটে নিয়ে ফিরবো৷ আমি, তুমি, মাহিন ও তুহিন....বিজয়ের দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়াবো সবাই৷'''
আমার ব্লগে মাহবুবুল আলম লিখেছেন, বিশ্বকাপ উত্তেজনা যেন কখনো মাত্রা অতিক্রম না করে৷ তাঁর কথায়, ‘‘চার বছর পর আবার এলো বিশ্বকাপ ফুটবল৷ এই আসরের বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি ব্রাজিলের জার্সিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ' লিখে বিশ্ব আসরে মাঠে থাকবে দলটি৷ তাই এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই৷ বাড়িতে বাড়িতে উড়ছে আর্জেটিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স বা অন্য কোনো দেশের পতাকা৷ এ নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হলেও কে শুনছে কার কথা৷ ফুটবল উত্তেজনায় কাঁপা দোষের নয় বরং খেলার প্রতি টান থাকাই উচিত৷ তাই বলে নিজের দেশের পতাকাকে অবমাননা করে অন্য কোনো দেশের পতাকাকে আকাশচুম্বীভাবে উড়ানো কোনো দেশপ্রেমিকদের কাজ হতে পারে না৷ আসুন, সবাই খেলাকে খেলা হিসেবেই দেখি৷ আমাদের প্রত্যেককে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে – খেলার জন্য যেন আমাদের আবেগ ও উচ্ছ্বাসের মাত্রা কখনো ছাড়িয়ে না যায়৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এমএইচ মামুন লিখেছেন, ‘‘দেশটা মা, আর পতাকা মায়ের আঁচল৷ নিজের মায়ের আঁচল রেখে অন্য আঁচলে মুখ গুজে শান্তি খুঁজতে যেও না৷ বঙ্গমাতা রাগ করলে মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ