থামছে না শ্রমিক বিক্ষোভ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩বেতন বাড়ানোর দাবিতে বুধবারও গাজীপুর, আশুলিয়ার জিরানী ও নারায়ণগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা৷ সে সময় পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ এতে জিরানীর চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ একই দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কও অবরোধ করে তারা৷ আর নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়৷ বিক্ষোভরত শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরি ৮,০০০ টাকা দাবি করেন৷ তাঁরা বলেন, এর নীচে হলে তাদের জন্য জীবনধারণ অসম্ভব৷ ২০১০ সালে সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি ধার্য করা হয় ৩,০০০ টাকা৷ আর নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করার পর মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকার প্রস্তাব করেছে মালিকপক্ষ৷
এদিকে শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের ফলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পোশাক কারখানা বন্ধ থাকছে৷ কোথাও কোথাও অসন্তোষের আশঙ্কায় মালিকরা পোশাক কারখানা বন্ধ রাখছেন৷ ফলে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান৷ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পোশাক খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে৷ তাঁর কথা, মালিক পক্ষ ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর যে প্রস্তাব করেছে, তা প্রস্তাব মাত্র৷ চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এ নিয়ে বিক্ষোভ বা উত্তেজনা কাম্য নয়৷
তবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, মালিকদের অযৌক্তিক আচরণের কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে আরও বলেন, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৮,১১৪ টাকা৷ তাঁদের এই প্রস্তাব যে যৌক্তিক তা সিপিডি-র রিপোর্টেই প্রমাণিত হয়েছে৷ সিপিডি গবেষণা করে দেখিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন হওয়া উচিত ৮,২০০ টাকা৷
সিপিডি-র অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের প্রস্তাব হল – প্রথম বছরে ন্যূনতম মজুরি ৬,৫৬০ টাকা দেয়া হবে৷ মূল বেতন ৪,৩০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ১,৭২০ টাকা এবং চিকিত্সা ভাতা ৫৬০ টাকা৷ দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় বছরে এটা বেড়ে মোট ৮,২০০ টাকার প্রস্তাব রেখেছেন তাঁরা৷
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে হলে মালিকদের ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে যৌক্তিকভাবে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া উচিত৷ সরকারের উচিত মজুরি বোর্ডকে দিয়ে একইভাবে একটি ঘোষণা দেয়ানো৷ আর ২১শে অক্টোবর ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করা হবে৷ কিন্তু মজুরি বোর্ডের উচিত, আরো আগে যত দ্রুত সম্ভব ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করা৷ নয়তো শ্রমিক বিক্ষোভ থামানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি৷