ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩মালিকরা ন্যূনতম মজুরি ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন৷ কিন্তু শ্রমিকরা প্রস্তাব করেছেন ৮,১১৪ টাকা৷ তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা৷
রানা প্লাজা ধসে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপ এবং বিদেশে বাংলাদেশি পোশাকের বাজার ধরে রাখতে তৈরি পোশাক খাতে নতুন করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়৷ এই বোর্ড ২১ অক্টোবর ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করবে৷ এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩,০০০ টাকা৷
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম এই মজুরি বোর্ডের একজন সদস্য৷ তিনি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮,১১৪ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ২০১০ সালে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছিল প্রাপ্য মজুরির চেয়ে কম৷ আর এখন গত ৩ বছরে মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাপন ব্যয়, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা এসব মিলিয়ে কোনোভাবেই তার প্রস্তাবিত মজুরির কমে একজন পোশাক শ্রমিকের টিকে থাকা সম্ভব নয়৷
এদিকে পোশাক প্রস্তুতকারী মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছে ৩,৬০০ টাকা৷ তারা ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা বাড়াতে প্রস্তুত৷ তাদের কথা গত ৩ বছরে যে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে তার হিসাব ধরেই তারা এই প্রস্তাব করেছেন৷ বিজিএমইএ'র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান এর চেয়ে বেশি মজুরি বাড়ানো তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ তাঁর কথা তাদের আয় বাড়েনি বরং কমেছে৷ তাই তারা বাড়তি মজুরি দেবেন কোথা থেকে৷ এর জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন গার্মেন্টস মালিকরা অতি মুনাফা করছেন৷ তারা সেই মুনাফা ছাড়তে চাইছেন না৷ তাই তারা মজুরি বাড়ানোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন৷ তাই পোশাক শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি আদায়ে দেশে ও বিদেশে প্রচারণা চালাবেন৷ তারা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে যাবেন, কথা বলবেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এবং নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে৷
২০১০ সালে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ইকতেদার আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন শ্রমিক ও মালিকদের ন্যুনতম মজুরি নিয়ে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে আসতে হবে৷ তিনি বলেন মালিকদের কথিত মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ধরে মজুরি নির্ধারণ হয় না৷ ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণে আরো অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়৷ তিনি বলেন ২০১০ সালে ৩,০০০ টাকায় যে জিনিস কেনা যেত এখন কি তা ৩,৬০০ টাকায় কেনা সম্ভব? বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ১,০৪৪ ডলার - যা কম বেশি ৮০,০০০ টাকা৷ সেই বিচেনায় শ্রমিকদের মাসিক ন্যুনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা৷ তিনি বলেন ১০ ডলার দিয়ে তৈরি করা একটি পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে ২৫ ডলারে৷ তাহলে শ্রমিকদের লাভের অংশ কেন দেয়া হবে না৷ তাঁর মতে মালিকদের অতি মুনাফার মনোভাব ছাড়তে হবে৷ শ্রমিকদের জীবনযাপনের উপযোগী ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে৷ মালিকদের গো ধরলে চলবেনা৷